সমস্ত লেখাগুলি

মনুসংহিতায় ব্রাহ্মণ, নারী ও শূদ্রের স্থান -
সুধীররঞ্জন হালদার
Nov. 19, 2024 | হিন্দুধর্ম | views:8553 | likes:0 | share: 0 | comments:0

ভারতের সংবিধানে দেশের সমস্ত মানুষকে সমানাধিকার দেওয়া হয়েছে। জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে একই অধিকার ভোগ করার সুবিধা প্রতিটি নাগরিকের। দেশের আইনও সেভাবেই তৈরি হয়েছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেই অধিকার ভোগ করা সংবিধান কার্যকর হবার পঁয়ষট্টি বছর পরেও অধিকাংশ লোকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। এর কারণ হিন্দুদের সামাজিক এবং ধর্মীয় আইনকানুন। আমাদের সংবিধানে যাই থাকুক না কেন, হিন্দুরা অর্থাৎ বৈদিক ধর্মাবলম্বীরা সে সব বিধানের তোয়াক্কা না করে তাদের ধর্মীয় আইনকানুনকেই সামাজিক জীবনধারণে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এই ধর্মীয় আইনকানুন যেসব গ্রন্থে লেখা রয়েছে তার মধ্যে মনুস্মৃতি বা মনুসংহিতাই হল প্রধান গ্রন্থ। এক কথায় সমগ্র ধর্মশাস্ত্রের মধ্যে নিয়মকানুন পালনের ক্ষেত্রে মনুসংহিতাকেই সর্বোচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। ভারতবর্ষে সর্বত্র বৈদিকধর্মীয়রা এই গ্রন্থের বিধান অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে গ্রহণ করেই তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় আচার-আচরণ পালন করে থাকে।


এই মনুসংহিতা একখানি চরম বিভেদমূলক গ্রন্থ। মানুষকে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র- জন্মসূত্রে এই চারটি বর্ণে ভাগ করা, সংখ্যাগুরু শূদ্রসমপ্রদায়কে ভাগ করে হাজার হাজার জাতের সৃষ্টি করা এবং তাদের মধ্যে আবার কাউকে কাউকে অস্পৃশ্য হিসাবে নির্দেশ করাই এই বিভেদের মূল উৎস। মানুষে মানুষে ঐক্যের পরিবর্তে বিভেদ সৃষ্টি করতে এই গ্রন্থ যে কেবল উৎসাহই দেয় তাই নয়, বরং এই বিভেদকে কঠোরভাবে পালন করার নির্দেশও দেয়। ফলে মানুষে মানুষে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগিয়ে তোলার পরিবর্তে মানুষের অন্তরে ঘৃণা ও হিংসার বীজ ছড়িয়ে দেয়। ঠিক এই কারণেই ১৯২৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর মাহাদে বাবাসাহেব ড. ভীমরাও আম্বেদকরের নেতৃত্বে মনুস্মৃতি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।  এই বহ্নুৎসবের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলা হয়, “মনুস্মৃতি শ্রদ্ধার উপযোগী নয় এবং একে পবিত্র গ্রন্থ বলা যায় না। এর প্রতি ঘৃণা দেখানোর জন্য এই সম্মেলন সভাশেষে এর এক প্রতিলিপি দাহ করতে মনস্হ করেছেন। কেননা এ ধর্মের বেশে সামাজিক অবিচার জিইয়ে রাখার প্রণালী বলেই তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে চায়। ”


কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ভারতের ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজসংস্কারক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের এ জন্য কোনো বিবেক জাগ্রত হয়নি। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী এই গ্রন্থকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত হলেও উচ্চবর্ণীয় শাসকগোষ্ঠী কিংবা বুদ্ধিজীবী বা সমাজসংস্কারকদের কেউই সে বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন না, বরং সযত্নে ওই গ্রন্থটিকে লালন করে থাকেন।  ফলে গ্রন্থখানি বহুল প্রচারিত ও ভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় অনুদিত এই গ্রন্থের বর্তমান যুগেও প্রবল চাহিদা।  বিশেষ করে ব্রাহ্মণদের কাছে প্রাণভোমরাস্বরূপ এই গ্রন্থ। যাঁরা এই গ্রন্থের অনুবাদ কিংবা সম্পাদনা করেন, তাঁরা বিভেদমূলক হিংসা-বিদ্বেষপূর্ণ ধর্মীয় আইন তথা নীতিগুলিকে বিভিন্ন রকম ব্যাখ্যার প্রলেপে বাস্তবসম্মত করে তোলার হীন প্রচেষ্টা করে থাকেন। বলাবাহুল্য এই গ্রন্থের প্রকাশ ও প্রচারকর্তারা সকলেই ব্রাহ্মণ। এই গ্রন্থের সমর্থনেই তাঁরা আজও সমাজের উচ্চশিখরে বাস করে দ্বিধাহীন চিত্তে মনুবাদী ভাবধারায় কালাতিপাত করে থাকেন।


মনুস্মৃতি বা মনুসংহিতা স্বয়ম্ভূ অর্থাৎ স্রষ্টা মনু কতৃক কথিত (রচিত) বলে ওই গ্রন্থে দাবি করা হয়। ভারতের প্রাচীন ইতিহাসে মনুর নাম বিশেষ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত ছিল বলে রচয়িতা হিসাবে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করার জন্যই ওই নাম ব্যবহার করা হয়েছে। আসলে মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য এটা একটা বিরাট ধাপ্পা ছাড়া আর কিছুই নয়। ওই গ্রন্থের রচয়িতা হিসাবে স্বাক্ষর রয়েছে ভৃগুর পারিবারিক নামে। ওই গ্রন্থের প্রকৃত নাম ছিল ‘মনুর ধর্মশাস্ত্র‘। প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে লেখা ‘ভৃগু কর্তৃক রচিত‘। কোথাও তাঁর আসল নাম লেখা নেই। তবে নারদস্মৃতির গ্রন্থকার তার নাম জানিয়ে দিয়েছে। তার প্রকৃত নাম ছিল সুমতি ভার্গব। সে ‘মনু‘ ছদ্মনাম নিয়ে এই গ্রন্থ রচনা করে।


পৃথিবীর বহু বিখ্যাত ঐতিহাসিক পণ্ডিতব্যক্তিরাই এ বিষয়ে একমত যে, পুষ্যমিত্রের ব্রাহ্মণ্যবাদী বিপ্লব সংঘটিত হবার পরে সুমতি ভার্গব ১৭০-১৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই গ্রন্থ রচনা করে। অর্থাৎ বৌদ্ধধর্ম প্রতিষ্ঠার অনেক পরে অশোকের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা ও বৌদ্ধধর্মকে রাজধর্ম করার ফলে ব্রাহ্মণ্যধর্মের হীনাবস্থায় বহুকাল গত হলে ব্রাহ্মণদের চক্রান্তে পুষ্যমিত্র কর্তৃক সম্রাটকে হত্যা করে ব্রাহ্মণ্যশাসন প্রতিষ্ঠার পরে এই গ্রন্থ রচিত হয়। প্রধানত বৌদ্ধধর্মের বিরুদ্ধে এবং পুরোনো ধর্মশাস্ত্রকে বরবাদ করে দিয়ে বর্ণব্যবস্থাকে জন্মগত করে ব্রাহ্মণকে সবার ঊর্ধ্বে রেখে হাজারো জাতপাতের সৃষ্টি করে একেবারেই নতুন করে ব্রাহ্মণ্যধর্মী এই গ্রন্থ রচিত হয়। এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল রাজহত্যাকারী ব্রাহ্মণ সেনাপতি স্বয়ং পুষ্যমিত্র যে তখন সিংহাসনে আসীন। অথচ এই গ্রন্থ স্বয়ম্ভূ মনু কর্তৃক রচিত বলে প্রাচীনত্বের ভণিতা করে মানুষকে ধোঁকা দেওয়া হয়।  বারোটি অধ্যায়ে রচিত এই গ্রন্থ ‘সৃষ্টি প্রকরণ‘ থেকে শুরু করে ধর্মীয় এবং সামাজিক সমস্ত আইনকানুন নিয়ম ইত্যাদি সবই যে সুচতুর ব্রাহ্মণদের কল্পনাপ্রসূত, নিজেদের সুখসুবিধা চরিতার্থ করার একখানি যন্ত্রবিশেষ হিসাবে লিখিত হয়েছে, এ কথা যুক্তি-বিজ্ঞানের আলোয় কারও বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়।


অশোক বৌদ্ধধর্মকে রাজধর্ম করেছিলেন। ফলে সাম্রাজ্যের সর্বত্র মানুষে মানুষে সমতা ফিরে আসায় সমাজে উচ্চ-নীচ ভেদাভেদ আর ছিল না। ব্রাহ্মণ্যধর্মের লোকদের কাছে এটা ছিল একটা বিরাট ধাক্কা। ব্রাহ্মণেরা বর্ণশ্রেষ্ঠ- এই দাবির সুবাদে প্রাপ্ত সকল সুযোগসুবিধা ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা থেকে তারা বঞ্চিত হয়ে সাম্রাজ্যের সকল ক্ষেত্রে গৌণ ও অবহেলিত হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষের মর্যাদার চেয়ে সমাজে তাদের আলাদা কোনো বিশেষ মর্যাদা ছিল না। এক কথায় ব্রাহ্মণ্যবাদকে দমন করা হয়েছিল। অশোক সব ধরণের পশুবলি নিষিদ্ধ করেছিলেন। তার ফলে পশুবলিদানের অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণদের পাওনা মোটা রকমের দক্ষিণা থেকেও তারা বঞ্চিত হয়েছিল, যা ছিল তাদের জীবনধারণের প্রধান উপায়। মৌর্যদের শাসনকাল ছিল ১৪০ বছর। এই দীর্ঘ সময়কাল ধরে ব্রাহ্মণেরা বলতে গেলে নিপীড়িত ও অবদমিত শ্রেণি হিসাবে বাস করতে বাধ্য হয়। ব্রাহ্মণদের এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় ছিল বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা। সামবেদী ব্রাহ্মণ পুষ্যমিত্র সুঙ্গই সেই বিদ্রোহের ধ্বজা ধরে প্রথম এগিয়ে আসে।


পুষ্যমিত্র নিজে ব্রাহ্মণ এবং তাঁর নির্দেশে মনুস্মৃতি রচিত হয়েছে বলেই ব্রাহ্মণদের রাজারও ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়েছিল। পুষ্যমিত্রের বিপ্লবের সময় পর্যন্ত আর্য আইনে বলা ছিলঃ-

১। রাজকার্য কেবলমাত্র ক্ষত্রিয়দের অধিকারভুক্ত একজন ব্রাহ্মণ কখনও রাজা হতে পারবে না।

২। কোনো ব্রাহ্মণ সৈনিকের কাজ করতে পারবে না। (আইনটি খুবই কঠোর ছিল। অপস্তম্ভ ধর্মসূত্র অনুযায়ী ‘একজন ব্রাহ্মণ শুধু পরীক্ষার জন্যও তার হাতে কখনও অস্ত্র ধারণ করবে না। ‘)

৩। রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা পাপ।

পুষ্যমিত্র তিনটি আইনই লঙঘন করেছে। সে ব্রাহ্মণ হয়ে রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তাঁকে হত্যা করেছে, সৈনিকের বৃত্তি অবলম্বন করেছে এবং রাজাও হয়েছে।  তার এই কলঙ্কপূর্ণ বলপূর্বক সিংহাসন দখল জনসাধারণ মেনে নিতে পারেনি। সেই জন্যই আইন পরিবর্তন করে পুষ্যমিত্রের নির্দেশে নতুন করে মনুস্মৃতি লেখা হয়েছে।


                উপস্হমুদরং জিহ্বা হস্তৌ পাদৌ চ পঞ্চমম্‌।

                চক্ষুর্নাসা চ কর্ণৌ চ ধনং দেহস্তথৈব চ \


বঙ্গানুবাদ। উপস্হ (স্ত্রী বা পুরুষের জননেন্দ্রিয়), উদর, জিহ্বা হাত, পা, চোখ, নাক, কান, ধনসম্পত্তি এবং দেহ- এই দশটি দণ্ডস্থান।

মনুর নির্দেশ হল যে লোক যে অঙ্গের দ্বারা অপরাধ করবে তার সেই অঙ্গেই পীড়া দিতে হবে। যেমন কেউ যদি পরনারীর সাথে সঙ্গম করে তবে তার জননেন্দ্রিয়ে আঘাত দিয়ে শাস্তি দিতে হবে। চুরি করার অপরাধে উদরের শাস্তি অর্থাৎ আহার বন্ধ প্রভৃতি। গালাগালি এবং মারামারির অপরাধে যথাক্রমে জিহ্বা ও হাতের উপর দণ্ড হবে। পদাঘাতের অপরাধে দুই পায়ের উপর দণ্ড হবে। রাজপত্নী প্রভৃতিকে কুদৃষ্টিতে দেখলে চোখের উপর দণ্ড হবে। পরনারীর অনুলেপনের গন্ধগ্রহণ করলে নাকের উপর দণ্ড হবে। রাজার গোপন মন্ত্রণা লুকিয়ে শুনলে কানের উপর দণ্ড হবে। বিশেষ কোনো অপরাধের শাস্তিস্বরূপ ধনসম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হলে ধনের উপর দণ্ড। দেহের উপর দণ্ড হল মহাপাতকী ব্যক্তিকে হত্যা করা। 


কিন্তু ব্রাহ্মণ কোনো অপরাধ করলে এর কোনো দণ্ডই দেওয়া চলবে না। অক্ষত শরীরে সমগ্র ধনসম্পত্তিসহ তাকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে শুধু।

এমনি হাজারো নিয়মের বেড়াজালে জাতপাত সৃষ্টিকারী অমানবিক গ্রন্থ এই মনুসংহিতা, যেখানে জন্মগত কারণে ব্রাহ্মণ হলেই তার সমস্ত সুখভোেগর ব্যবস্থা এবং ক্রমনিচুবর্ণের জন্য যেসব বিধি, তার মধ্যে নারী ও শূদ্রের অবর্ণনীয় অসম্মান ও হীনতার বিভেদনীতির প্রধান প্রধান কয়েকটি বিষয় এই ছোট্ট পুস্তিকায় দেখানো হয়েছে। এর বাইরেও আরও বহু নিয়মকানুন, আইন, বিধান ইত্যাদি ব্রাহ্মণ, নারী ও শূদ্রের জন্য আলাদা আলাদা উল্লেখ আছে।

এই পুস্তকে মূল সংস্কৃত শ্লোকগুলি বাংলা হরফে লিখে দেওয়া হয়েছে, যাতে বিজ্ঞ পাঠক অনুবাদের সাথে মিলিয়ে নিতে পারেন। অনুবাদ পাঠ করেই পাঠকরা এর মর্মার্থ বুঝতে পারবেন বলে আলাদা করে আর বিশেষ টীকা বা আলোচনা করা হয়নি। সংস্কৃত শ্লোকে লুপ্ত ‘অ‘কার চিহ্নটি বর্তমানে কম্পিউটারের বাংলা হরফে নেই বলে বিশেষ চিহ্ন ‘ হ‘ দিয়ে বোঝানো হয়েছে।


প্রথম পরিচ্ছেদ


সৃষ্টি প্রকরণ


                মনুমেকাগ্রমাসীনমভিগম্য মহর্ষয়ঃ।

                প্রতিপূজ্য যথান্যায়মিদং বচনমব্রুবন্‌ \ ১ম, ১ \

                ভগবন্‌ সর্ববর্ণানাং যথাবদনুপূর্বশঃ।

                অন্তরপ্রভবাণাঞ্চ ধর্মান্‌ নো বক্তুমর্হসি \ ১ম, ২ \

বঙ্গানুবাদ। ভগবান মনু, ঈশ্বরে একান্ত মনঃসমাধান করিয়া সমাসীন রহিয়াছেন, এমন সময় জিজ্ঞাসু মহর্ষিগণ, তাঁহার সন্নিধানে সমাগত হইয়া, বিধিমত পূজা-বন্দনাদি করিয়া তাঁহাকে এই কথা জিজ্ঞাসা করিলেন, হে ভগবন্‌ ! ব্রাহ্মণাদি বর্ণ সকলের ও অম্বষ্ঠকরণ ক্ষত্রিয় প্রভৃতি অনুলোম প্রতিলোমজাত সংকর জাতির ধর্মসমূহ যথাযথভাবে এবং যথাক্রমে আমাদের বলুন।


                স তৈঃ পৃষ্টস্তথা সম্যগমিতৌজা মহাত্মভিঃ।

                প্রত্যুবাচার্চ্য তান্‌ সর্বান্‌ মহর্ষীন্‌ শ্রূয়তামিতি \ ১ম, ৪ \

বঙ্গানুবাদ। অসীম জ্ঞানশক্তি সম্পন্ন্‌ ভগবান মনু তাঁদের সাগ্রহে বলতে লাগলেন। 


                সোহভিধ্যায় শরীরাৎ স্বাৎ সিসৃক্ষুর্বিবিধাঃ প্রজাঃ।

                অপ এব সসর্জাদৌ তাসু বীজমবাসৃজৎ \ ১ম, ৮ \

বঙ্গানুবাদ। সেই সূক্ষ্মরূপী ভগবান নিজের দেহ থেকে বিবিধ প্রজা সৃষ্টি করার ইচ্ছায় ধ্যানযোগে প্রথমে জলের সৃষ্টি করলেন এবং তাতে আপনার বীজ (শক্তি) নিক্ষেপ করলেন। 


                তদণ্ডমভবদ্ধৈমং সহস্রাংশুসমপ্রভম্‌।

                তস্মিন্‌ জজ্ঞে স্বয়ং ব্রহ্মা সর্বলোকপিতমহঃ \ ১ম, ৯ \

বঙ্গানুবাদ।  সেই বীজ সূর্যের ন্যায় প্রভাবিশিষ্ট সোনার বরন এক অণ্ডে (ডিম) পরিণত হল; সেই অণ্ডে তিনি স্বয়ংই সমস্ত লোকের পিতামহ ব্রহ্মারূপে জন্মগ্রহণ করলেন।


                তস্মিন্নণ্ডে স ভগবানুষিত্বা পরিবৎসরম্‌।

                স্বয়মেবাত্মনো ধ্যানাৎ তদণ্ডমকরোদ্‌দ্বিধা \ ১ম, ১২ \

বঙ্গানুবাদ। ভগবান ব্রহ্মা সেই অণ্ডে সংবৎসরকাল (ব্রহ্ম পরিমাণে) বাস করে নিজের ধ্যানবলে তাকে দুই ভাগে ভাগ করলেন।


                তাভ্যাং স শকলাভ্যাং চ দিবং ভূমিঞ্চ নির্মমে।

                মধ্যে ব্যোম দিশশ্চাষ্টাবপাংস্থানঞ্চ শাশ্বতম্‌ \ ১ম, ১৩ \

বঙ্গানুবাদ। তিনি দুই ভাগে বিভক্ত ঊর্ধ্বখণ্ডে স্বর্গলোক এবং নিম্নখণ্ডে ভূলোক নির্মাণ করলেন এবং মধ্যভাগে আকাশ, আট দিক এবং চিরস্থায়ী জলাধার (সমুদ্র প্রভৃতি) সৃষ্টি করলেন। (এতে বোঝা যায় যে সমুদ্র পৃথিবীতে নয়, শূন্যে অবস্হিত।)


                সর্বেষাং তু স নামানি কর্মাণি চ পৃথক্‌ পৃথক্‌।

                বেদশব্দেভ্য এবাদৌ পৃথক্‌সংস্থাশ্চ নির্মমে \ ১ম, ২১ \

বঙ্গানুবাদ।  সৃষ্টির সূচনায় এই পরমাত্মা বেদ শব্দ থেকে পূর্ব পূর্বকল্পে যার যেমন নামাদি ছিল তা জেনে নিয়ে সকলের পৃথক পৃথক নাম (যেমন মানুষ জাতির মানুষ, বানর জাতির বানর) পৃথক পৃথক কর্ম (যেমন ব্রাহ্মণ জাতির অধ্যয়ন, ক্ষত্রিয় জাতির প্রজাপালন) এবং পৃথক পৃথক বৃত্তি (যেমন ব্রাহ্মণের যাজন) নির্দেশ করে দিয়েছিলেন।


এই শ্লোক থেকে এ কথা পরিষ্কার প্রতীয়মান যে এই সৃষ্টিপ্রকরণের পূর্বেও ব্রহ্মাণ্ড ছিল এবং একটা মহাপ্রলয়ের ফলে তা বিলীন হয়ে গিয়েছিল। পরে এই নতুন ব্রহ্মাণ্ড পুনরায় সৃষ্টি করা হয়েছিল। সৃষ্টির সূচনায় এই নতুন পরমাত্মা বেদ শব্দ থেকে সব জেনে নিয়ে পূর্বকল্প মত জাতি, কর্ম, বৃত্তি ইত্যাদির নামকরণ পুনঃপ্রবর্তিত করে দিলেন।


                যং তু কর্মণি যস্মিন্‌ স ন্যযুঙ্‌ক্ত প্রথমং প্রভুঃ।

                স তদেব স্বয়ং ভেজে সৃজ্যমানঃ পুনঃপুনঃ \ ১ম, ২৮ \

বঙ্গানুবাদ।  প্রজাপতি (ব্রহ্মা) সৃষ্টির আদিতে যাকে যে কর্মে নিযুক্ত করলেন (যেমন ব্রাহ্মণ জাতিকে যাজন কর্মে এবং অধ্যাপনায়), সে পুনঃ পুনঃ জন্মগ্রহণ করেও নিজের থেকেই সেই কর্ম করতে লাগল।


                হিংস্রাহিংস্রে মৃদুক্রূরে ধর্মাধর্মাবৃতানৃতে।

                যদ্‌যস্য সো ্হদধাৎ সর্গে তৎ তস্য স্বয়মাবিশৎ \ ১ম, ২৯ \

বঙ্গানুবাদ।  (সিংহ প্রভৃতির) হিংসা, (হরিণ প্রভৃতির) অহিংসা, (ব্রাহ্মণের) মৃদুতা, (ক্ষত্রিয়ের) ক্রূরতা, (ব্রহ্মচারীর ব্রহ্মচর্য) ধর্ম, (মাংস সেবন মৈথুন প্রভৃতি) অধর্ম; (দেবগণের) সত্য, (নরগণের) মিথ্যা- যার যে গুণ তিনি সৃষ্টিকালে বিধান করলেন সেই গুণ তার মধ্যে আপনা আপনিই প্রবেশ করতে লাগল।


                যথর্তুলিঙ্গান্যৃতবঃ স্বয়মেবর্তুপর্যয়ে।

                স্বানি স্বান্যভিপদ্যন্তে তথা কর্মাণি দেহিনঃ \ ১ম, ৩০ \

বঙ্গানুবাদ।  বসন্ত প্রভৃতি ঋতু যেমন নিজের নিজের অধিকার বলে আম্রমুকুল প্রভৃতি ঋতুচিহ্ন ধারণ করে, তেমনি দেহধারী পুরুষেরাও নিজ নিজ কর্মের অধিকার পেয়ে থাকে।


                লোকানাং তু বিবৃদ্ধ্যর্থং মুখবাহুরুপাদতঃ।

                ব্রাহ্মণং ক্ষত্রিয়ং বৈশ্যং শূদ্রঞ্চ নিরবর্তয়ৎ \ ১ম, ৩১ \

বঙ্গানুবাদ।  ভূলোক প্রভৃতির প্রজা বৃদ্ধির জন্য পরমেশ্বর আপনার মুখ, বাহু, ঊরু, এবং পা থেকে যথাক্রমে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র- এই চারিটি বর্ণ সৃষ্টি করলেন।


                দ্বিধা কৃত্বাত্মনো দেহমর্দ্ধেন পুরুষোহভবৎ।

                অর্দ্ধেন নারী তস্যাং স বিরাজমসৃজৎ প্রভু \ ১ম, ৩২ \

বঙ্গানুবাদ।  পরমেশ্বর আপনার দেহকে দুই ভাগে বিভক্ত করে এক অর্ধেক নারী এবং এক অর্ধ্বে পুরুষ হলেন। সেই পুরুষ সেই নারীতে বিরাট নামক এক পুরুষকে উৎপাদন করলেন। 


                তপস্তপ্ত্বাসৃজৎ যং তু স স্বয়ং পুরুষো বিরাট্‌।

                তং মাং বিত্তাস্য সর্বস্য স্রষ্টারং দ্বিজসত্তমাঃ \ ১ম, ৩৩ \

বঙ্গানুবাদ।  হে শ্রেষ্ঠ দ্বিজগণ! সেই বিরাট পুরুষ বহুকাল তপস্যা করে যাকে সৃষ্টি করলেন আমিই সেই মনু, আমাকে এই সমস্ত জগতের স্রষ্টা বলে জেনো। 


এই শ্লোকে মনু নিজেকে সমস্ত জগতের স্রষ্টা অর্থাৎ নিজেকে সর্বশক্তিমান বলে পরিচয় দিচ্ছেন। অথচ উপরের শ্লোকগুলিতে পরমাত্মা বা পরমেশ্বর অর্থাৎ ব্রহ্মাই সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন বলা হয়েছে। এমনকি ব্রহ্মার মুখ থেকে ব্রাহ্মণ, বাহু থেকে ক্ষত্রিয়, উরু থেকে বৈশ্য এবং পা থেকে শূদ্রের সৃষ্টিও বলা হয়েছে। তথাপি মনুই আবার নিজেকে সমস্ত জগতের স্রষ্টা অর্থাৎ সর্বশক্তিমান বলছেন।  কারণ, এই গ্রন্থ যারা পড়বে তারাই অনুধাবন করবে যে এই মনুই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং তাঁর এই বচন সকলের শ্রদ্ধেয়- এইটি প্রতিষ্ঠা করাই রচয়িতার উদ্দেশ্য। মনু কথিত সমস্ত বিধান যে সৃষ্টিকর্তারই বিধান এই বিশ্বাসকে মেনে চলার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। অথচ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এই মনু হল ধূর্ত ব্রাহ্মণ সুমতি ভার্গব! আর এই হল তার রচিত ‘মনুসংহিতা‘য় সৃষ্টি প্রকরণ! বিজ্ঞ পাঠক নিজেই বিচার করুন কতখানি ধূর্ততার সাথে এবং কল্পনার দৌড়ে রচিত হয়েছে এইসব শ্লোকগুলি!


পরবর্তী শ্লোকগুলি অনুযায়ী- মনু দশজন প্রজাপতির (পুত্র) জন্ম দিলেন তপস্যার বলে, কোনো নারীর গর্ভে নয়। বিশেষত একটিও কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেন না। সেই দশজন প্রজাপতি আবার সাতজন মনু (মনুষ্য) সৃষ্টি করলেন। কিন্তু এরা প্রজাপতিদের ঔরসজাত, না হাতে গড়া, তার কোনো উল্লেখ নেই। প্রতিমার মতো হাতে গড়া হলে দরকার ছিল তাদের প্রাণ প্রতিষ্ঠার এবং ঔরসজাত হলে দরকার ছিল নারীর। কিন্তু কিছুরই উল্লেখ নেই। আদি মনুর পৌত্র সপ্তমনুর মধ্যে কারোই স্ত্রীর উল্লেখ নেই। অথচ তাদের বংশাবলিতে বর্তমান পৃথিবী ভরপুর!


দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

ব্রাহ্মণ


এই পরিচ্ছেদে আমরা দেখব মনুসংহিতায় কীভাবে ব্রাহ্মণকে সকলের ঊর্ধ্বে রেখে তাদের জন্য সামাজিক, ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগসুবিধা ভোগ করার বিধান বানানো হয়েছে।


ব্রাহ্মণের অধিকারঃ-


                উত্তমাঙ্গোদ্ভবাজ্জৈষ্ঠ্যাদ্‌ ব্রহ্মণশ্চৈব ধারণাৎ।

                সর্বস্যৈবাস্য সর্গস্য ধর্মতো ব্রাহ্মণঃ প্রভু \ ১ম, ৯৩ \

বঙ্গানুবাদ।  যেহেতু ব্রাহ্মণগণ ব্রহ্মার মুখ থেকে উদ্ভূত, প্রথম জাত এবং বেদকে অবলম্বন করেন সে কারণে তাঁরা অধিকার বলে এই সৃষ্ট জগতের প্রভু।


                ভূতানাং প্রাণিনঃ শ্রেষ্ঠা নরেষু প্রাণিনাং বুদ্ধিজীবিনঃ

                বুদ্ধিমৎসু নরাঃ শ্রেষ্ঠা নরেষু ব্রাহ্মণাঃ স্মৃতাঃ।  \ ১ম, ৯৬ \

বঙ্গানুবাদ।  সৃষ্টি মধ্যে সজীব প্রাণী শেষ্ঠ, জীবের মধ্যে যারা বুদ্ধিমান তারা শ্রেষ্ঠ, বুদ্ধিমান প্রাণীদের মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠ এবং মানুষের মধ্যে ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ।


                ব্রাহ্মণো জায়মানো হি পৃথিব্যামধিজায়তে।

                ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং ধর্মকোষস্য গুপ্তয়ে \ ১ম, ৯৯ \

বঙ্গানুবাদ।  ব্রাহ্মণ জন্মগ্রহণ করা মাত্রই সমস্ত লোকের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হয়। কারণ, ব্রাহ্মণই সকলের ধর্মসমূহ রক্ষার জন্য প্রভুসম্পন্ন হয়ে থাকে।


                সর্বং স্বং ব্রাহ্মণস্যেদং যৎ কিঞ্চিজ্জগতীগতম্‌।

                শ্রৈষ্ঠ্যেনাভিজনেনেদং সর্বং বৈ ব্রাহ্মণো  ্হর্হতি \ ১ম, ১০০ \

বঙ্গানুবাদ।  বিশ্বের যাবতীয় সবকিছুই ব্রাহ্মণের সম্পদ। তার জন্মসূত্রে শ্রেষ্ঠতার জন্য বস্তুত ব্রাহ্মণই এই সম্পদের অধিকারী।


                স্বমেব ব্রাহ্মণো ভুঙ্‌ক্তে স্বং বস্তে স্বং দদাতি চ।

                আনৃশংস্যাদ্‌ ব্রাহ্মণস্য ভুঞ্জতে হীতরে জনাঃ \ ১ম, ১০১ \

বঙ্গানুবাদ।  ব্রাহ্মণ যে খাদ্য গ্রহণ করে, যে পরিধেয় বস্ত্র পরিধান করে, তা অন্যের দ্বারা প্রস্তুত হলেও, তা তার নিজের।  কারণ অন্য মরণশীলগণ ব্রাহ্মণদের অনুগ্রহে জীবন ধারণ করে।


                অবিদ্বাংশ্চৈব বিদ্বাংশ্চ ব্রাহ্মণো দৈবতং মহৎ।

                প্রণীতশ্চাপ্রণীতশ্চ যথাগ্নির্দৈবতং মহৎ \ ৯ম, ৩১৭ \

বঙ্গানুবাদ।  পবিত্র হোক বা অপবিত্র হোক, অগ্নি যেমন মহান দেবতা, তেমনি ব্রাহ্মণ বিদ্বান বা মূর্খ যাই হোক না কেন, সে দেবতাতুল্য।


                এবং যদ্যপ্যনিষ্টেষু বর্তন্তে সর্বকর্মসু।

                সর্বথা ব্রাহ্মণাঃ পূজ্যাঃ পরমং দৈবতং হি তৎ \ ৯ম, ৩১৯ \

বঙ্গানুবাদ।  ব্রাহ্মণ সকল প্রকার নিন্দাজনক কাজে নিযুক্ত থাকলেও সকলের নিকট পূজ্য, যেহেতু ব্রাহ্মণ দেবতা-স্বরূপ।


                বৈশেষ্যাৎ প্রকৃতিশ্রৈষ্ঠ্যান্নিয়মস্য চ ধারণাৎ।

                সংস্কারস্য বিশেষাচ্চ বর্ণানাং ব্রাহ্মণঃ প্রভুঃ \ ১০ম, ৩ \

বঙ্গানুবাদ।  প্রথম জাত হওয়ার কারণে, মৌলিক শ্রেষ্ঠতার কারণে, নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রিত আচরণে, সংস্কারের পবিত্রতার কারণে ব্রাহ্মণই সকল জাতির প্রভু।


                বিধাতা শাসিতা বক্তা মৈত্রী ব্রাহ্মণ উচ্যতে।

                তস্মৈ নাকুশলং ব্রূয়ান্ন শুষ্কা গিরিমীরয়েৎ \ ১১শ, ৩৫ \

বঙ্গানুবাদ।  ব্রাহ্মণকে সমসড় বিশ্বের স্রষ্টা, শাস্তিদাতা, শিক্ষক এবং সর্বপ্রকার সৃষ্ট প্রাণীর হিতৈষী বলে ঘোষণা করা হয়েছে।  অপ্রসন্ন হতে পারে এমন কোনো বাক্য অথবা কোনো অশালীন বাক্য তাকে কেউ বলবে না।


                বিস্রব্ধং ব্রাহ্মণঃ শূদ্রাদ্‌ দ্রব্যোপাদানমাচরেৎ।

                ন হি তস্যান্তি কিঞ্চিৎ স্বং ভর্তৃহার্যধনো হি সঃ \ ৮ম, ৪১৭ \

বঙ্গানুবাদ।  ব্রাহ্মণ নিঃসঙ্কোচে শূদ্রের জিনিস বাজেয়াপ্ত করে নিতে পারে।  কারণ, শূদ্রের নিজের বলতে কোনো ধন নেই, সে প্রভুর জন্যই ধন আহরণ করে।

ব্রাহ্মণকে কখনও অসন্তুষ্ট করা যাবে না। এর বিরুদ্ধে মনুস্মৃতি নিম্নলিখিত শ্লোকে রাজাকে সতর্ক করে দিয়েছেন ঃ-


                পরামপ্যাপদং প্রাপ্তো ব্রাহ্মণান্‌ ন প্রকোপয়েৎ।

                তে হ্যেনং কুপিতা হন্যুঃ সবলবাহনম্‌ \ ৯ম, ৩১৩ \

বঙ্গানুবাদ।  রাজা যতই বিপদে পড়ুক না কেন ব্রাহ্মণকে নিন্দা করে ক্রোধান্বিত করবে না। কেননা ব্রাহ্মণ ক্রুদ্ধ হলে তিনি তৎক্ষণাৎ তার সৈন্য এবং যানবাহনসহ তাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।


                ন ব্রাহ্মণো বেদয়েত কিঞ্চিদ্‌ রাজনি ধর্মবিৎ।

                স্ববীর্যণৈব তান্‌ শিষ্যান্মানবানপকারিণঃ \ ১১শ, ৩১ \

বঙ্গানুবাদ।  ভাল করে আইন জানে এমন কোনো ব্রাহ্মণের কোনো ক্ষতির জন্য রাজার কাছে অভিযোগ করার প্রয়োজন নেই, কারণ তার নিজের ক্ষমতাবলে সে অনিষ্টকারীকে কঠোর শাস্তি দিতে পারে।


                স্ববীর্যাদ্রাজবীর্যাচ্চ স্ববীর্যং বলবত্তরম্‌।

                তস্মাৎ স্বেনৈব বীর্যেণ নিগৃহ্নীয়াদরীন্‌ দ্বিজঃ \ ১১শ, ৩২ \

বঙ্গানুবাদ।  নিজের (ব্রাহ্মণের) ক্ষমতা রাজার ক্ষমতা অপেক্ষা শক্তিশালী। অতএব একজন ব্রাহ্মণ তার নিজ শক্তি দ্বারা তার শত্রুকে দমন করতে পারে।


                সৈন্যাপত্যঞ্চ রাজ্যঞ্চশ দণ্ডনেতৃত্বমেব চ।

                সর্বলোকাধিপত্যঞ্চ বেদাশাস্ত্রবিদর্হতি \ ১২শ, ১০০ \

বঙ্গানুবাদ।  রাজ্যের প্রধান সেনাধ্যক্ষের পদ, যা সরকারের সর্বোচ্চ পদ, এবং প্রত্যেকের উপর যার পূর্ণ আধিপত্য, তা একজন বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণের প্রাপ্য।       


                হত্বা লোকানপীমাংস্ত্রীনশ্নন্নপি যতস্ততঃ।

                ঋগ্বেদং ধারয়ন্‌ বিপ্রো নৈনঃ প্রাপ্নোতি কিঞ্চন \ ১১শ, ২৬২ \

বঙ্গানুবাদ।  ঋগ্বেদধারী ব্রাহ্মণ ত্রিজগতের সকলকে হত্যা করলে এবং যত্রতত্র ভোজন করলেও কোনো পাপে লিপ্ত হয় না। 


                ঋক্‌সংহিতাং ত্রিরভ্যাস্য যজুযাং বা সমাহিতঃ।

                সাম্নাং বা সরহস্যানাং সর্বপাপৈঃ প্রমুচ্যতে \ ১১শ, ২৬৩ \

বঙ্গানুবাদ।  উপনিষদসহ ঋক্‌, যজু এবং সামবেদ তিনবার আবৃিত্ত করলে সকল পাপ থেকে মুক্ত হওয়া যায়। 


                শস্ত্রং দ্বিজাতিভির্গ্রাহ্যং ধর্মো যত্রোপরুধ্যতে।

                দ্বিজাতীনাঞ্চ বর্ণানাং বিপ্লবে কালকারিতে \ ৮ম, ৩৪৮ \

                আত্মনশ্চ পরিত্রাণে দক্ষিণানাং চ সঙ্গরে।

                স্ত্রীবিপ্রাভ্যুপপত্তৌ চ ধর্মেণ ঘ্নন্‌ ন দুষ্যতি \ ৮ম, ৩৪৯ \

বঙ্গানুবাদ।  ধর্মদ্বারা প্রতিষ্ঠিত ন্যায্য অধিকারে কোনো শক্তি বাধা প্রদান করলে এবং কোনো দুঃসময়ে দ্বিজ শ্রেণীর উপর কোনো আকস্মিক বিপদ নেমে এলে দ্বিজগণ অস্ত্র ধারণ করতে পারবে।


                ক্ষত্রস্যাতিপ্রবৃদ্ধস্য ব্রাহ্মণান্‌ প্রতি সর্বশঃ

                ব্রহ্মৈব সন্নিয়ন্ত্‌ স্যাৎ ক্ষত্রং হি ব্রহ্মসম্ভবম্‌ \ ৯ম, ৩২০ \

বঙ্গানুবাদ।  ক্ষত্রিয়দের কেহ (সৈনিক বা রাজা) যদি ব্রাহ্মণের বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তোলন করে তবে ব্রাহ্মণ নিজেই তাকে শাস্তি দেবে, কারণ সৈনিকবৃত্তি ব্রাহ্মণ থেকেই প্রথম শুরু হয়।


                যদা স্বয়ং ন কুর্যাত্তু নৃপতিঃ কার্যদর্শনম্‌।

                তদা নিযুঞ্জ্যাদ্বিদ্বাংসং ব্রাহ্মণং কার্যদর্শনে \ ৮ম, ৯ \

বঙ্গানুবাদ।  রাজা যখন স্বয়ং সব কাজ (বিবাদ বিষয়ে) দেখাশোনা করতে পারবে না, তখন সেই সব কাজ দেখার জন্য বিদ্বান ব্রাহ্মণকে নিযুক্ত করবে।


                সোহস্য কার্যাণি সম্পশ্যেৎ সভ্যৈরেব ত্রিভির্বৃতঃ

                সভামেব প্রবিশ্যাগ্র্যামাসীনঃ স্হিত এব বা \ ৮ম, ১০ \

বঙ্গানুবাদ।  সেই বিদ্বান ব্রাহ্মণ আরও তিনজন সহকারীসহ রাজদরবারে বিচারের জন্য আগত সমস্ত বিষয়ে উপবিষ্ট বা দণ্ডায়মান থেকে সে সব বিষয় বিচার করবে।


                বিদ্বাংস্তু ব্রাহ্মণো দৃষ্ট্বা পূর্বোপনিহিতং নিধিম্‌।

                অশেষতোহপ্যাদদীত সর্বস্যাধিপতির্হি সঃ \ ৮ম, ৩৭ \

বঙ্গানুবাদ।  বেদবিদ বিদ্বান ব্রাহ্মণ পূর্বের কোনো ধন যদি ভূমিমধ্যে পায়, তবে সেই ধন সে নিজেই সম্পূর্ণ নিয়ে নেবে।  তার কোনো অংশ রাজাকে দেবার প্রয়োজন নেই; যেহেতু ব্রাহ্মণই ধনের প্রকৃত অধিকারী।


                যন্তু পশ্যেন্নিধিং রাজা পুরাণং নিহিতং ক্ষিতৌ।

                তস্মাদ্‌ দ্বিজেভ্যো দত্ত্বার্দ্ধমর্দ্ধং কোষে প্রবেশয়েৎ \ ৮ম, ৩৮ \

বঙ্গানুবাদ।  রাজা যদি ভূমিমধ্যে কোনো ধন পায়, তবে তার অর্ধেক ব্রাহ্মণদের দান করে বাকি অর্ধাংশ রাজকোষে গ্রহণ করবে।


                দত্ত্বা ধনন্তু বিপ্রেভ্যঃ সর্বদণ্ডসমুত্থিম্‌।

                পুত্রে রাজ্যং সমাসৃজ্য কুর্বীত প্রায়ণং রণে \ ৯ম, ৩২৩ \

বঙ্গানুবাদ।  যদি রাজা তার মৃত্যু সন্নিকট অনুভব করে, তবে সেই দণ্ড দ্বারা প্রাপ্ত সমস্ত ধন ব্রাহ্মণদের দান করে পুত্রের হাতে রাজ্যভার সমর্পণ করে যুদ্ধ কিংবা উপবাসাদি দ্বারা প্রাণত্যাগ করবে।


                সর্বেষামপ্যভাবে তু ব্রাহ্মণা রিক্‌থভাগিনঃ

                ত্রৈবিদ্যাঃ শুচয়ো দান্তাস্তথা ধর্মো ন হীয়তে \ ৯ম, ১৮৮ \

বঙ্গানুবাদ।  যদি কোনো ব্যক্তির ধনের কোনো অধিকারী না পাওয়া যায়, তবে তা বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণগণ পাবে।  এর ফলে তার শ্রাদ্ধাদি ক্রিয়ার কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না।


                অহার্যং ব্রাহ্মণদব্যং রাজ্ঞা নিত্যমিতি স্হিতিঃ।

                ইতরেষান্তু বর্ণানাং সর্বাভাবে হরেন্নৃপঃ \ ৯ম, ১৮৯ \

বঙ্গানুবাদ।  এটা হল শাশ্বত নিয়ম যে, রাজা কখনও ব্রাহ্মণের ধন গ্রহণ করতে পারবে না। তবে উপযুক্ত উত্তরাধিকারী না থাকলে অন্য বর্ণের ব্যক্তিদের ধন রাজাই গ্রহণ করবে।


                অনাম্নাতেষু ধর্মেষু কথং স্যাদিতি চেদ্ভবেৎ।

                যং শিষ্টা ব্রাহ্মণা ব্রূয়ুঃ স ধর্ম স্যাদশঙ্কিতঃ \ ১২শ, ১০৮ \

বঙ্গানুবাদ।  এমন কোনো পরিস্হিতি বা বিষয়ের সম্মুখীন যদি হতে হয় যা সম্পর্কে কোনো বিধান দেওয়া নেই, তা হলে শিষ্ট ব্রাহ্মণেরা যা বলবে তাকেই অকাট্য বিধান বলে গ্রহণ করতে হবে।


ব্রাহ্মণের কর্মঃ-


ব্রাহ্মণের জীবিকা নির্বাহের জন্য মনু যেসব কর্মের বিধান দিয়েছেন।

                অধ্যাপনমধ্যয়নং যজনং যাজনং তথা।

                দানং প্রতিগ্রহঞ্চৈব ব্রাহ্মণানামকল্পয়ৎ \ ১ম, ৮৮ \

বঙ্গানুবাদ।  শিক্ষা, বেদপাঠ, নিজের এবং অপরের কল্যাণের জন্য যজ্ঞানুষ্ঠান, ভিক্ষা দেওয়া এবং দান গ্রহণ করা তিনি (ব্রহ্মা) ব্রাহ্মণের জন্য নির্দিষ্ট করে দিলেন।


                অধীয়ীরংস্ত্রয়ো বর্ণাং স্বকর্মস্থা দ্বিজাতয়ঃ।

                প্রব্রূয়াদ্‌ ব্রাহ্মণস্ত্বেষাং নেতরাবিতি নিশ্চয়ঃ \ ১০ম, ১ \

বঙ্গানুবাদ।  দ্বিজবর্ণ তিনটি অর্থাৎ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য।  এই তিন বর্ণই ধর্মপরায়ণ হয়ে বেদ অধ্যয়ন করবে। কিন্তু এদের মধ্যে একমাত্র ব্রাহ্মণ ব্যতীত অন্য দু’টি বর্ণ অর্থাৎ ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য বেদের অধ্যাপনা করতে পারবে না।


                বৈশেষ্যাৎ প্রকৃতিশ্রৈষ্ঠ্যান্নিয়মস্য চ ধারণাৎ।

                সংস্কারস্য বিশেষাচ্চ বর্ণানাং ব্রাহ্মণঃ প্রভুঃ \ ১০ম, ৩ \

বঙ্গানুবাদ।  জন্মগত কারণে উৎকর্ষতা, বেদ অধ্যয়ন, অধ্যাপনা ও ব্যাখ্যানে, উপযুক্ত নিয়ম ধারণে যোগ্যতা এবং ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র অপেক্ষা সংস্কারের বিশিষ্টতাযুক্ত ব্রাহ্মণ সকল বর্ণের শ্রেষ্ঠ।              


                অধ্যাপনমধ্যয়নং যজনং যাজনং তথা।

                দানং প্রতিগ্রহশ্চৈব ষট্‌ কর্মাণ্যগ্রজন্মনঃ \ ১০ম, ৭৫ \

বঙ্গানুবাদ।  ব্রাহ্মণদের ছয়টি কর্ম হল- অধ্যয়ন, অধ্যাপনা, যজন, যাজন, দান ও প্রতিগ্রহ (দান গ্রহণ করা)।


                ষণ্নাস্তু কর্মণামস্য ত্রীণি কর্মাণি জীবিকা।

                যাজনাধ্যাপনে চৈব বিশুদ্ধচ্চ প্রতিগ্রহঃ \ ১০ম, ৭৬ \

বঙ্গানুবাদ।  এই ছয়টি কর্মের মধ্যে অধ্যাপনা, যাজন ও সৎপ্রতিগ্রহ- এই তিনটি ব্রাহ্মণদের জীবিকা নির্বাহের জন্য নির্দিষ্ট।


                ত্রয়ো ধর্মা নিবর্তন্তে ব্রাহ্মণাৎ ক্ষত্রিয়ং প্রতি।

                অধ্যাপনং যাজনঞ্চ তৃতীয়শ্চ প্রতিগ্রহঃ \ ১০, ৭৭ \

বঙ্গানুবাদ।  ক্ষত্রিয়ের জীবিকার ক্ষেত্রে অধ্যাপনা, যাজন ও প্রতিগ্রহ- এই তিনটি নিষিদ্ধ।


                বৈশ্যং প্রতি তথৈবৈতে নিবর্তেরন্নিতি স্হিতিঃ।

                ন তৌ প্রতি হি তান্‌ ধর্মান্‌ মনুরাহ প্রজাপতিঃ \ ১০ম, ৭৮ \

বঙ্গানুবাদ।  ক্ষত্রিয়ের ন্যায় বৈশ্যদের ক্ষেত্রেও মনু অধ্যাপনা, যাজন ও প্রতিগ্রহ- এই তিনটি কর্ম নিষিদ্ধ করেছেন। 

অর্থাৎ অধ্যাপনা, যাজন ও দান গ্রহণ করা ব্রাহ্মণদের একচেটিয়া অধিকার। ওই কাজে অন্য কেউ ভাগ বসাতে পারবে না।

                শাস্ত্রাস্ত্রভৃত্ত্বং ক্ষত্রস্য বণিক্‌পশুকৃষির্বিশঃ।

                আজীবনার্থং ধর্মস্তু দানমধ্যয়নং যজিঃ \ ১০ম, ৭৯ \

বঙ্গানুবাদ।  প্রজারক্ষার জন্য অস্ত্রধারণ ক্ষত্রিয়ের বৃত্তি। পশুপালন, কৃষি ও বাণিজ্য বৈশ্যের বৃত্তি। দান, যাগ ও অধ্যয়ন- এই তিনটি কর্ম ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যের কর্তব্য বলে জানবে।


                বেদাভ্যাসো ব্রহ্মণস্য ক্ষত্রিয়স্য চ রক্ষণম্‌।

                বার্তাকর্মৈব বৈশ্যস্য বিশিষ্টানি স্বকর্মসু \ ১০ম, ৮০ \


বঙ্গানুবাদ।  জীবিকা অর্জনের জন্য যে সমস্ত উপায়ের কথা বলা হয়েছে তন্মধ্যে সবচেয়ে ভাল হল ব্রাহ্মণের পক্ষে বেদ-অধ্যাপনা, ক্ষত্রিয়ের পক্ষে প্রজাপালন এবং বৈশ্যের পক্ষে ব্যবসা-বাণিজ্য।

                অজীবংস্তু যথোক্তেন ব্রাহ্মনঃ স্বেন কর্মণা।

                জীবেৎ ক্ষত্রিয়ধর্মেণ স হ্যস্য প্রত্যনন্তরঃ \ ১০, ৮১ \

বঙ্গানুবাদ।  ব্রাহ্মণ যদি নিজ বৃত্তি দ্বারা জীবিকা অর্জন করতে না পারে, তবে সে ক্ষত্রিয়ের বৃত্তি অবলম্বন করে জীবিকা অর্জন করতে পারবে।

                উভাভ্যামপ্যজীবংস্তু কথং স্যাদিতি চেদ্ভবেৎ।

                কৃষিগোরক্ষমাস্থায় জীবৈদ্বৈশ্যস্র জীবিকাম্‌ \ ১০, ৮১২ \

বঙ্গানুবাদ।  ব্রাহ্মণ যদি তার নিজের ও ক্ষত্রিয়ের বৃত্তি দ্বারা জীবিকা অর্জন করতে না পারে তবে, সে বৈশ্যের বৃত্তি দ্বারা জীবিকা অর্জন করতে পারবে।  অর্থাৎ ব্রাহ্মণ তার খুশি মত যে কোনো বৃত্তিই অবলম্বন করতে পারবে।


                বৈশ্যবৃত্ত্যাপি জীবংস্তু ব্রাহ্মণঃ ক্ষত্রিয়োহপি বা।

                হিংসাপ্রায়াং পরাধীনাং কৃষিং যত্নেন বর্জয়েৎ \ ১০ম, ৮৩ \

বঙ্গানুবাদ।  ব্রাহ্মণ বা ক্ষত্রিয়কে যদি বৈশ্য বৃত্তি অবলম্বন করে জীবিকা অর্জন করতে হয়, তবে তাদের হিংসামূলক কৃষিকার্য বর্জন করতে হবে।

                কৃষিং সাধ্বিতি মন্যন্তে সা বৃত্তিঃ সদ্বিগর্হিতা।

                ভূমিং ভূমিশয়াংশ্চৈব হন্তি কাষ্ঠময়োমুখম্‌ \ ১০ম, ৮৪ \

বঙ্গানুবাদ।  কৃষিকার্য উত্তম বৃত্তি হলেও সজ্জন ব্যক্তিরা তা নিন্দনীয় মনে করে; যেহেতু কৃষিকার্য করতে গেলে হল চালনাকালে মৃত্তিকাস্হিত বহু প্রাণী মারা যায়।

                ইদন্তু বৃত্তিবৈকল্যাত্ত্যজতো ধমনৈপুণম্‌।

                বিট্‌পণ্যমুদ্ধৃতোদ্ধারং বিক্রেয়ং বিত্তবর্ধনম্‌ \ ১০ম, ৮৫ \

বঙ্গানুবাদ।  ধর্মানুগ বৃত্তির দ্বারা জীবিকা অর্জন সম্ভবপর না হলে, তারা বৈশ্য বৃত্তির মধ্যে আপত্তিকর জীবিকা বাদ দিয়ে ধনবর্ধক অন্যান্য বৃত্তি গ্রহণ করবে।

                অদ্রোহেণৈব ভূতানামল্পদ্রোহেণ বা পুনঃ।

                যা বৃত্তিস্তাং সমাস্থায় বিপ্রো জীবেদনাপদি \ ৪র্থ, ২ \

বঙ্গানুবাদ।  আপৎকাল ব্যতীত অন্য সময়ে যাতে কোনো প্রাণীর কিছুমাত্র অনিষ্ট না হয়, অথবা স্বল্পমাত্র পীড়ন হয়, এরূপ বৃত্তি আশ্রয় করে ব্রাহ্মণ জীবিকা নির্বাহ করবে।

                যাত্রামাত্রণ্ডপ্রসিদ্ধ্যর্থং স্বৈঃ কর্মভিরগর্হিতৈঃ।

                অক্লেশেন শরীরস্য কুর্তীত ধনসঞ্চয়ম্‌ \ ৮র্থ, ৩ \

বঙ্গানুবাদ।  জীবন ধারণের জন্য শরীরকে কোনো রূপ ক্লেশ না দিয়ে ব্রাহ্মণ নিজের বর্ণবিহিত অনিন্দিত কর্মের দ্বারা ধন অর্জন করবে।


                ম্রিয়মাণোহপ্যাদদীত ন রাজা শ্রোত্রিয়াৎ করম্‌।

                ন চ ক্ষুধাহস্য সংসীদেচ্ছ্রোত্রিয়ো বিষয়ে বসন্‌ \ ৭ম, ১৩৩ \

বঙ্গানুবাদ।  রাজা অর্থাভাবে বিপন্ন হলেও কোনো ব্রাহ্মণের নিকট থেকে কর গ্রহণ করতে পারবে না। অপরপক্ষে কোনো বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ যেন ক্ষুধায় কষ্ট না পায় তার প্রতি রাজাকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

বাহ্‌ কী চমৎকার ব্যবস্থা! ব্রাহ্মণের কাছ থেকে কখনও কর নেওয়া চলবে না, বরং ব্রাহ্মণ জীবিকা অর্জনে অসমর্থ হলে রাজা তার ভরণপোষণেরও ব্যবস্থা করবে!


ব্রাহ্মণের জন্য দণ্ডবিধানঃ-

বিভিন্ন রকম অপরাধে ব্রাহ্মণদের জন্য শাস্তি হিসাবে মনুর বিধান দেখুন।

                কৌটসাক্ষ্যং তু কুর্বাণাংস্ত্রীন্‌ বর্ণান্‌ ধার্মিকো নৃপঃ।

                প্রবাসয়েদ্‌ দণ্ডয়িত্বা ব্রাহ্মণং তু বিবাসয়েৎ \ ৮ম, ১২৩ \

বঙ্গানুবাদ।  ক্ষত্রিয়াদি তিনটি বর্ণ মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে বিধান অনুসারে রাজা তাদের অর্থদণ্ডসহ দেশ থেকে বহিষ্কার করবে।  কিন্তু ব্রাহ্মণকে অর্থদণ্ড না করে কেবলমাত্র বহিষ্কার করবে।

                দশ স্থানানি দণ্ডস্য মনুঃ স্বায়ম্ভুবো ্হব্রবীৎ।

                ত্রিষু বর্ণেষু যানি স্যুরক্ষতো ব্রাহ্মণো ব্রজেৎ \ ৮ম, ১২৪ \

ঙ্গানুবাদ।  স্বায়ম্ভূব মনু দণ্ডদানের দশটি স্থানের নির্দেশ দিয়েছেন এবং এগুলি কেবলমাত্র ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদের জন্য।  ব্রাহ্মণদের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার দৈহিক দণ্ড না দিয়ে কেবলমাত্র দেশ থেকে বহিষ্কার করতে হবে।


                ব্রাহ্মক্ষত্রিয়াভ্যাং তু দণ্ডঃ কার্যো বিজানতা।

                ব্রাহ্মণে সাহসঃ পূর্বঃ ক্ষত্রিয়ে ত্বেব মধ্যমঃ \ ৮ম, ২৭৬ \

বঙ্গানুবাদ।  ব্রাহ্মণ এবং ক্ষত্রিয়ের মধ্যে পারস্পরিক নিন্দাবাদ হলে প্রত্যক্ষদর্শী রাজা ব্রাহ্মণকে সবচেয়ে কম (প্রথম সাহস) দণ্ড দেবে এবং ক্ষত্রিয়ের মাঝামাঝি মধ্যম সাহস) দণ্ড দেবে।

                মৌণ্ড্যং প্রাণান্তিকো দণ্ডো ব্রাহ্মণস্য বিধীয়তে।

                ইতরেষাং তু বর্ণানাং দণ্ডঃ প্রাণান্তিকো ভবেৎ \৮ম, ৩৭৯ \

বঙ্গানুবাদ।  প্রাণদণ্ডের যোগ্য অপরাধে ব্রাহ্মণের দণ্ড হবে মস্তক মুণ্ডন। অন্যান্য বর্ণের প্রাণদণ্ডই করবে- এই হল শাস্ত্রের বিধান।

                ন জাতু ব্রাহ্মণং হন্যাৎ সর্বপাপেষ্বপি স্হিতম্‌।

                রাষ্ট্রাদেনং বহিষ্কুর্যাৎ সমগ্রধনমক্ষতম্‌ \ ৮ম, ৩৮০ \


বঙ্গানুবাদ।  সর্বপ্রকার পাপে পাপী হলেও ব্রাহ্মণকে কখনও বধ করবে না- বরং সমগ্র ধনের সঙ্গে তাকে অক্ষত দেহে রাজ্য থেকে বহিষ্কার করবে।

                ন ব্রাহ্মণবধাদ্‌ ভূয়ানধর্মো বিদ্যতে ভুবি।

                তস্মাদস্য বধং রাজা মনসাপি ন চিন্তয়েৎ \ ৮ম, ৩৮১ \


বঙ্গানুবাদ।  পৃথিবীতে ব্রাহ্মণবধের তুলনায় গুরুতর অধর্ম (পাপ) কিছুই নেই। এই জন্য ব্রাহ্মণকে বধ, অঙ্গচ্ছেদনাদি করার কথা রাজা কখনও চিন্তাও করবে না।                 

           প্রাজাপত্যমদত্ত্বাশ্বমগ্ন্যাধেয়স্য দক্ষিণাম্‌।

                অনাহিতাগ্নির্ভবতি ব্রাহ্মণো বিভবে সতি \ ১১শ, ৩৮ \


বঙ্গানুবাদ।  সম্পদ থাকা সত্ত্বেও যে ব্রাহ্মণকে এবং দেবতাকে অশ্ব দক্ষিণা না দেয়, সে অগ্নি আধানের ফলপ্রাপ্ত হয় না।

                পুণ্যান্যন্যানি কুর্বীত শ্রদ্দধানো জিতেন্দ্রিয়ঃ।

                ন ত্বল্পদক্ষিণৈর্যজেতেহ কথঞ্চন \ ১১শ, ৩৯ \


বঙ্গানুবাদ।  যজ্ঞের উপযুক্ত দক্ষিণা দিতে না পারলে সে অন্যান্য অনুষ্ঠান করবে; কিন্তু দক্ষিণার যে বিধান আছে তা দিতে সমর্থ না হলে কখনও যজ্ঞ করাবে না।

                ইন্দ্রিয়াণি যশঃ স্বর্গমায়ুঃ কীর্তিং প্রজাঃ পশূন্‌।

                হন্ত্যল্পদকিণো যজ্ঞস্তস্মান্নাল্পধনো যজেৎ \ ১১শ, ৪০ \


বঙ্গানুবাদ।  অল্প দক্ষিণা প্রদান করলে তার যশ, স্বর্গ, আয়ু, কীর্তি, প্রজা ও পশু সবই নষ্ট হবে। তাই স্বল্প সম্পদসম্পন্ন ব্যক্তি কখনও যজ্ঞ করবে না।

আত্মনশ্চ পরিত্রাণে দক্ষিণানাং চ সঙ্গরে।                                                                       স্ত্রীবিপ্রাভ্যুপপত্তৌ চ ধর্মেণ ঘ্নন্‌ ন দুষ্যতি \ ৮ম, ৩৪৯ \

বঙ্গানুবাদ।  আত্মরক্ষার্থে, দক্ষিণার অর্থ আদায়ে, নারী ও ব্রাহ্মণকে রক্ষার নিমিত্ত কাউকে হত্যা করলেও তা দোষাবহ নয়।

ব্রাহ্মণ পূজাপার্বণের দক্ষিণা আদায়ের জন্য কাউকে হত্যাও করতে পারে।

ব্রাহ্মণকে দানের ফলঃ-

ব্রাহ্মণ যাতে আবহমানকাল বংশপরম্পরায় আরাম আয়েসে কালাতিপাত করতে পারে সে জন্য নানাভাবে তাকে দান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোন জিনিস দানে কী ফল লাভ হবে তাও বিস্তারিত বলা হয়েছে, যাতে সবাই দানে আগ্রহী হয়।  শুধু তাই নয়, এই দান কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ জন্য প্রায়শ্চিত্ত নামক পাপ খণ্ডনের এক বিধানও তৈরি করা হয়েছে।


                ভূমিদো ভূমিমাপ্নোতি দীর্ঘমায়ুর্হিরণ্যদঃ

                তিলপ্রদঃ প্রজামিষ্টাং দীপদশ্চক্ষুরুত্তমম্‌ \ ৪র্থ, ২৩০ \


বঙ্গানুবাদ।  ভূমি দান করলে অধিক ভূমির আধিপত্য লাভ হয়। স্বর্ণ দান করলে দীর্ঘ পরমায়ু প্রাপ্তি হয়, গৃহ দান করলে উত্তম অট্টালিকা লাভ হয়। রৌপ্য দান করলে উত্তম রূপ লাভ হয়।

                বাসোদশ্চন্দ্রসালোক্যমশ্বিসালোক্যমশ্বদঃ।

                অনডুদ্দঃ শ্রিয়ং পুষ্টাং গোদো ব্রধ্নস্য পিষ্টপম্‌ \ ৪র্থ, ২৩১ \


বঙ্গানুবাদ।  বস্ত্র দান করলে চন্দ্রের ন্যায় ঐশ্বর্য সম্পন্ন হয়ে চন্দ্রলোকে বসবাস করে। ঘোটক দান করলে অশ্বিলোকে যায়, বলীবর্দ (বলদ) দান করলে অতুল সম্পত্তি লাভ হয় এবং গাভী দান করলে ব্রহ্মলোক প্রাপ্তি হয়।

                যজেত রাজা ক্রতুভির্বিবিধৈরাপ্তদক্ষিণৈঃ।

                ধর্মার্থঞ্চৈব বিপ্রেভ্যো দদ্যাদ্ভোগান্‌ ধনানি চ \ ৭ম, ৭৯ \


বঙ্গানুবাদ।  দক্ষিণাবিশিষ্ট নানাপ্রকার যজ্ঞানুষ্ঠান, ধর্মার্থে ব্রাহ্মণগণকে নানাপ্রকার ভোগ্যবস্তু ও স্বর্ণাদি প্রদান করা রাজার বিশেষ কর্তব্য।

                আবৃত্তানাং গুরুকুলাদ্বিপ্রাণাং পূজকো ভবেৎ।

                নৃপাণামক্ষয়ো হ্যেষ নিধির্ব্রাহ্মো ্হভিধীয়তে \ ৭ম, ৮২ \

বঙ্গানুবাদ।  ব্রাহ্মণপুত্র যখন গুরুগৃহ থেকে পাঠ সমাপন করে গৃহাশ্রমে ফিরবে, তখন তাকে রাজা ধনসম্পদ দ্বারা পূজা করবে। কারণ এরূপ পাত্রে দান করা রাজার পক্ষে অক্ষয় সম্পদ বলে গণ্য হবে।


                ন তং স্তেনা ন চামিত্রা হরন্তি ন চ নশ্যতি।

                তস্মাদ্রাজ্ঞা নিধাতব্যো ব্রাহ্মণেষ্বক্ষয়ো নিধিঃ \ ৭ম, ৮৩ \

বঙ্গানুবাদ।  এই সম্পদ চোর বা শত্রু হরণ করতে পারে না, বা এই সম্পদ কখনও বিনষ্ট হয় না। তাই রাজারা সর্বদাই এরূপ অক্ষয়নিধি ব্রাহ্মণকে অর্পণ করবে।

                সর্বরত্নানি রাজা তু যথার্হ প্রতিপাদয়েৎ।

                ব্রাহ্মণান্‌ বেদবিদুষো যজ্ঞার্থঞ্চৈব দক্ষিণাম্‌ \ ১১শ, ৪ \

বঙ্গানুবাদ।  যজ্ঞার্থী ও বেদবিদ ব্রাহ্মণকে রাজা সর্বদা বিভিন্ন প্রকার রত্ন ও দক্ষিণার জন্য উপযুক্ত অর্থ প্রদান করবে।

                সমমব্রাহ্মণে দানং দ্বিগুণং ব্রাহ্মণব্রুবে।


                প্রাধীতে শতসাহস্রমনন্তং বেদপারগে \ ৭ম, ৮৫ \

বঙ্গানুবাদ।  অব্রাহ্মণ দ্বিজকে দান করলে যে ফল পাওয়া যায়, অবিদ্বান ব্রাহ্মণকে  দান করলে তার দ্বিগুণ ফললাভ হয়।  বেদাধ্যয়নকারী ব্রাহ্মণকে দান করলে লক্ষগুণ ফললাভ হয় এবং যিনি সর্ববেদ পারদর্শী তাকে দান করলে অনন্ত ফল লাভ হয়।


                পাত্রস্য হি বিশেষেণ শ্রদ্দধানতয়ৈব চ

                অল্পং বা বহু বা প্রেত্য দানস্যাবাপ্যতে ফলম্‌ \ ৭ম, ৮৬ \

বঙ্গানুবাদ।  স্বল্প হোক বা বেশি হোক বিশ্বাসযুক্ত ও শ্রদ্ধাবান হয়ে দান করলে দানপাত্রের গুণের তারতম্য অনুসারে দানের ফললাভ হয়ে থাকে।

                সান্তানিকং যক্ষ্যমাণমধ্বগং সর্ববেদসম্‌।

                গুর্বর্থং পিতৃমাত্রর্থং স্বাধ্যায়ার্থ্যুপতাপিনঃ \ ১১শ, ১ \

                নবৈতান্‌ স্নাতকান্‌ বিদ্যাদ্‌ ব্রাহ্মণান্‌ ধর্মভিক্ষুকান্‌।

                নিঃস্বেভ্যো দেয়মেতেভ্যো দানং বিদ্যাবিশেষতঃ \ ১১শ, ২ \

বঙ্গানুবাদ।  সন্তানের জন্য বিবাহে ইচ্ছুক, যজ্ঞ করতে ইচ্ছুক, পরিব্রাজক, যজ্ঞ করে যিনি নিঃস্ব হয়েছে, পিতার জন্য, মাতার জন্য ও গুরুর জন্য যার অর্থের প্রয়োজন, শিক্ষাথর্ী এবং রোগী এই নয়জন নিঃস্ব ব্রাহ্মণকে ধর্মভিক্ষুক বলে মনে করবে এবং তাদের বিদ্যাবত্তা অনুসারে দান করবে।

                এতেভ্যো হি দ্বিজাগ্রেভ্যো দেয়মন্নং সদক্ষিণম্‌।

                ইতরেভ্যো বহির্বেদি কৃতান্নং দেয়মুচ্যতে \ ১১শ, ৩ \

বঙ্গানুবাদ।  এইসব ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠদের যজ্ঞবেদীর মধ্যে বসিয়ে দক্ষিণাসহ খাদ্য দান করবে এবং যজ্ঞবেদীর বাইরের ভিক্ষুকদেরও অন্নদান করবে।

                ধনানি তু যথাশক্তি বিপ্রেষু প্রতিপাদয়েৎ।

                বেদবিৎসু বিবিক্তেষু প্রেত্য স্বর্গং সমশ্নুতে \ ১১শ, ৬ \

বঙ্গানুবাদ।  বেদজ্ঞ এবং সংসারত্যাগী ব্রাহ্মণদের যথাসাধ্য অর্থদান করবে। এদের দান করলে পরলোকে স্বর্গলাভ হয়ে থাকে।

পাপ কাজের জন্য ধর্মীয় আইনে সাজা হল প্রায়শ্চিত্ত করা।  আর প্রায়শ্চিত্ত মানেই হল ব্রাহ্মণকে অকাতরে প্রচুর দান করা।

                অকুর্বন্‌ বিহিতং কর্ম নিন্দিতঞ্চ সমাচরন্‌।

                প্রসজংশ্চেন্দ্রিয়ার্থেষু প্রায়শ্চিত্তীয়তে নরঃ \ ১১শ, ৪৪ \

বঙ্গানুবাদ।  শাস্ত্রবিহিত কাজ না করলে অথবা নিন্দিত কাজের আচরণ করলে এবং অতিরিক্ত ইন্দ্রিয়াসক্ত হলে তাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।


                অকামতঃ কৃতে পাপে প্রায়শ্চিত্তং বিদুর্বুধাঃ।

                কামকারকৃতেহপ্যাহুরেকে শ্রুতিনিদর্শনাৎ \ ১১শ, ৪৫ \

বঙ্গানুবাদ।  ঋষিগণ বলেছেন যে, অজ্ঞানতাবশত কোনো পাপ করলে তার প্রায়শ্চিত্ত আছে। আবার কেউ কেউ শাস্ত্রের প্রমাণ দেখিয়ে বলে থাকেন যে, সজ্ঞানে পাপ করলেও তার প্রায়শ্চিত্ত হতে পারে।


                অকামতঃ কৃতে পাপং বেদাভ্যাসেন শুধ্যতি।

                কামতস্তু কৃতং মোহাৎ প্রায়শ্চিত্তৈঃ পৃথগ্বিধৈঃ \ ১১শ, ৪৬ \


 বঙ্গানুবাদ।  অজ্ঞানতাবশত যে পাপ হয় বেদপাঠ দ্বারা তার নিরসন ঘটে। কিন্তু সজ্ঞানে ইন্দ্রিয় তাড়নায় পাপের নিরসন প্রায়শ্চিত্ত ব্যতীত হয় না।


                চরিতব্যমতো নিত্যং প্রায়শ্চিত্তং বিশুদ্ধয়ে।


                নিন্দ্যৈর্হি লক্ষণৈর্যুক্তা জায়ন্তেহনিষ্কৃতৈনসঃ \ ১১শ, ৫৪ \

বঙ্গানুবাদ।  তাই পাপ করলে পাপ খণ্ডনের জন্য অবশ্যই প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। সে কারণে পাপ কার্যের জন্য সর্বদা প্রায়শ্চিত্ত করা উচিত। অর্থাৎ জেনেশুনে ইচ্ছে করে পাপকাজ করেও প্রায়শ্চিত্ত করলে তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কোনো কোনো প্রায়শ্চিত্ত শুধুমাত্র ব্রাহ্মণকে দান করেই করা যায়। আবার ধর্মীয় অনুষ্ঠান করেও করা হয়, সে ক্ষেত্রেও ব্রাহ্মণকে দান এবং দক্ষিণা অবশ্যই দিতে হবে।


ব্রাহ্মণের বিবাহবিধিঃ-


ব্রাহ্মণের বিবাহের বিধানে কী চমৎকার সুযোগসুবিধা রাখা হয়েছে দেখুন।

                সবর্ণাহগ্রে দ্বিজাতীনাং প্রশস্তা দারকর্মণি।

                কামতস্তু প্রবৃত্তানামিমাঃ স্যুঃ ক্রমশো বরাঃ \ ৩য়, ১২ \

বঙ্গানুবাদ।  দ্বিজবর্ণের প্রথম বিবাহ স্ববর্ণে হওয়াই প্রশস্ত। কিন্তু যারা কামলালসার দ্বারা পরিচালিত হয় তারা ক্রম-নিম্নবর্ণের কাউকে পত্নী হবার জন্য মনোনয়ন করতে পারে। অর্থাৎ ব্রাহ্মণ কামচরিথার্থ করার জন্য যে কোনো বর্ণের মেয়েকে বিয়ে করতে পারে। তাতে তার ব্রাহ্মণত্ব নষ্ট হবে না।

                শূদ্রৈব ভার্যা শূদ্রস্য সা চ স্বা চ বিশঃ স্মৃতে।

                তে চ স্বা চৈব রাজ্ঞশ্চ তাশ্চ স্বা চাগ্রজন্মনঃ \ ৩য়, ১৩ \


বঙ্গানুবাদ।  শূদ্রের পত্নী হবে শূদ্রানী, বৈশ্যের পত্নী হবে বৈশ্যা ও শূদ্রানী, ক্ষত্রিয়ের পত্নী হবে ক্ষত্রিয়া, বৈশ্যা ও শূদ্রানী এবং ব্রাহ্মণের পত্নী হবে ব্রাহ্মণী, ক্ষত্রিয়া, বৈশ্যা এবং শূদ্রানী।


                ন ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়য়োরাপদ্যপি হি তিষ্ঠতোঃ।

                কস্মিনংশ্চিদপি বৃত্তান্তে শূদ্রা ভার্যোপদিশ্যতে \ ৩য়, ১৪ \


বঙ্গানুবাদ।  বিপৎকালেও কোনো ব্রাহ্মণ বা ক্ষত্রিয়কে প্রথম স্ত্রী হিসাবে শূদ্রাণীকে গ্রহণ করার উপদেশ দেওয়া হয়নি।

নিম্নলিখিত শ্লোকগুলিতে আবার বিপরীত কথা বলা হয়েছে।

                হীনজাতিস্ত্রিয়ং মোহাদুদ্বহন্তো দ্বিজাতয়ঃ।

                কুলান্যেব নয়ন্ত্যাশু সসন্তানানি শূদ্রতাম্‌ \ ৩য়, ১৫ \

বঙ্গানুবাদ।  যদি মোহবশত কোনো দ্বিজ হীনবর্ণের কোনো নারীকে বিবাহ করে, তবে তার পুত্র-কন্যাসহ সে শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হবে।

                শূদ্রাং শয়নমারোপ্য ব্রাহ্মণো যাত্যধোগতিম্‌।

                জনয়িত্বা সুতং তস্যাং ব্রাহ্মণ্যাদেব হীয়তে \ ৩য়, ১৭ \

বঙ্গানুবাদ।  শূদ্রা-গমন করলে ব্রাহ্মণের অধোগতি হয় এবং তাতে সন্তান উৎপাদন করলে তার ব্রাহ্মণত্ব নষ্ট হয়।

                দৈবপিত্র্যাতিথেয়ানি তৎপ্রধানানি যস্য তু।

                নাশ্নন্তি পিতৃদেবাস্তং ন চ স্বর্গং স গচ্ছতি \ ৩য়, ১৮ \

বঙ্গানুবাদ।  শূদ্রাণী স্ত্রীসহ যদি কোনো ব্রাহ্মণ পিতৃকর্ম বা দেবলোকের কার্য করে তবে সেই হব্য দেবতা বা পিতৃপুরুষ গ্রহণ করেন না এবং তদ্বারা তার স্বর্গলাভ ঘটে না।

                বৃষলীফেনপীতস্য নিঃশ্বাসোপহতস্য চ।

                তস্যাঞ্চৈব প্রসূতস্য নিষ্কৃতির্ন বিধীয়তে \ ৩য়, ১৯ \

বঙ্গানুবাদ।  যে ব্রাহ্মণ শূদ্রাণীর অধরসুধা পান অর্থাৎ চুম্বন করে ও সেই রমণীর নিশ্বাস তার শরীরে প্রবেশ করে এবং তার গর্ভে সন্তান উৎপাদন করে তার মুক্তির কোনো পথ নেই।


ব্রাহ্মণের আহারঃ-


ব্রাহ্মণের অন্যান্য নিচবর্ণের অন্ন গ্রহণের ব্যাপারে কীভাবে ঘৃণা, হিংসা-বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়েছে তা নিচের শ্লোকগুলিতে দেখুন।

                রাজান্নং তেজ আদত্তে শূদ্রান্নং ব্রহ্মবর্চসম্‌।

                আয়ুঃ সুবর্ণকারান্নং যশশ্চর্মাবকর্তিনঃ \ ৪থর্র্, ২১৮ \

বঙ্গানুবাদ।  রাজার অন্ন গ্রহণ করলে ব্রাহ্মণের তেজ নষ্ট হয়, শূদ্রের অন্ন ভোজন করলে ব্রহ্মজ্ঞান নষ্ট হয়, স্বর্ণকারের অন্ন ভোজন করলে আয়ু নষ্ট হয় এবং চর্মকারের অন্ন ভোজনে খ্যাতি লোপ পায়।

                কারুকান্নং প্রজাং হন্তি বলং নির্ণেজকস্য চ।

                গণান্নং গণিকান্নঞ্চ লোকেভ্যঃ পরিকৃন্ততি \ ৪র্থ, ২১৯ \

বঙ্গানুবাদ।  শিল্পকারের অন্ন ভোজনে সন্তান নষ্ট হয়, রজকের অন্ন গ্রহণে বলহানি ঘটে, হোটেলে বা বারবণিতার অন্ন ভোজনে পূণ্যার্জিত স্বর্গ থেকে ভ্রষ্ট হতে হয়।


                পূযং চিকিৎসকস্যান্নং পুংশ্চল্যাস্ত্বন্নমিন্দ্রিয়ম্‌।

                বিষ্ঠা বার্দ্ধুষিকস্যান্নং শস্ত্রবিক্রয়িণো মলম্‌ \ ৪র্থ, ২২০ \

বঙ্গানুবাদ।  চিকিৎসকের অন্নভোজন পূজভক্ষণের সমান, ব্যভিচারিণী স্ত্রীর অন্নভোজন ইন্দ্রিয় অর্থাৎ শুক্রভোজন তুল্য; কূসীদজীবীর অন্নভোজন বিষ্ঠা ভোজনের সমান; এবং শস্ত্রাদি লৌহবিক্রয়ীর অন্নভোজন শ্লেষ্মাদিভোজনের সমান।    


                ভুক্ত্বা ্হতো ্হন্যতমস্যান্নমমত্যা ক্ষপণং ত্র্যহম্‌।

                মত্যা ভুক্ত্বাচরেৎ কৃচ্ছ্রং রেতো বিণ্‌মূত্রমেব চ \ ৪র্থ, ২২২ \

বঙ্গানুবাদ।  অজ্ঞানতাবশত (নিষিদ্ধ অন্ন) ভোজন করলে তিনদিন উপবাস করতে হবে। আর সজ্ঞানে ভোজন করলে কৃচ্ছ্রব্রত পালন করতে হবে এবং রেত, বিষ্ঠা ও মূত্র ভোজনের দ্বারাও প্রায়শ্চিত্ত করা যাবে।


                জীবিতাত্যয়মাপন্নো যো  ্হন্নমতি যতস্ততঃ।

                আকাশমিব পঙ্কেন ন স পাপেন লিপ্যতে \ ১০ম, ১০৪ \

বঙ্গানুবাদ।  যে ব্রাহ্মণ অন্নাভাবে জীবনসংশয়ে পতিত হয়েছে সে যত্রতত্র অন্নভোজন করলেও তার পাপ হয় না।

অর্থাৎ প্রয়োজনবোধে সে সকলের অন্নই ভোজন করতে পারে!


                ন ব্রাহ্মণস্য ত্বতিথির্গৃহে রাজন্য উচ্যতে।

                বৈশ্যশূদ্রৌ সখা চৈব জ্ঞতয়ো গুরুরেব চ \ ৩য়, ১১০ \

বঙ্গানুবাদ।  ব্রাহ্মণের গৃহে ক্ষত্রিয়, বৈশ্য বা শূদ্র এলে তারা অতিথি বলে গণ্য হবে না। এতদ্ব্যতীত বন্ধু, জ্ঞাতি বা গুরু এলেও অতিথি পদবাচ্য হতে পারে না।


                যদি ত্বতিথিধর্মেণ ক্ষত্রিয়ো গৃহমাব্রজেৎ।

                ভুক্তবৎসূক্তবিপ্রেষু কামং তমপি ভোজয়েৎ \ ৩য়, ১১১ \

বঙ্গানুবাদ।  যদি ক্ষত্রিয় অতিথিরূপে ব্রাহ্মণের গৃহে আসে তবে ব্রাহ্মণ অতিথিগণের ভোজনের শেষে তাকে ভোজন করাবে।


                বৈশ্যশূদ্রাবপি প্রাপ্তৌ কুটুম্বে  ্হতিথিধর্মিণৌ।

                ভোজয়েৎ সহ ভৃত্যৈস্তাবানৃশংস্যং প্রযোজয়ন্‌ \ ৩য়, ১১২ \


বঙ্গানুবাদ।  ব্রাহ্মণের গৃহে যদি বৈশ্য বা শূদ্র অতিথিরূপে আসে তবে গৃহকর্তা দয়াপরবশ হয়ে তাদের বাড়ির ভৃত্যদের সঙ্গে ভোজন করাবে।


তৃতীয় পরিচ্ছেদ


নারী

মনুর বিধানে নারীকে মিথ্যা এবং অপদার্থ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। নারীকে কোনোরকম স্বাধীনতাই মনু দেননি। নারীর কোনো ধর্মীয় সংস্কার নেই, কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণেও তার অধিকার নেই। তার বিদ্যা শেখা, বেদপাঠ বা বেদশ্রবণেরও অধিকার নেই।


                অমন্ত্রিকা তু কার্যেয়ং স্ত্রীণামাবৃদশেষতঃ।

                সংস্কারার্থং শরীরস্য যথাকালং যতাক্রমম্‌ ।  ২য়, ৬৬ \


বঙ্গানুবাদ।  নারীদের দেহশুদ্ধির জন্য উপনয়ন বাদে সমস্ত সংস্কারই যথাসময়ে করা উচিত। তবে এ সমস্ত সংস্কারে মন্ত্র প্রয়োগ করা যাবে না।

                বৈবাহিকো বিধিঃ স্ত্রীণাং সংস্কারো বৈদিকঃ স্মৃতঃ।

                পতিসেবা গুরৌ বাসো গৃহার্থোহগ্নিপরিষ্ক্রিয়া \ ২য়, ৬৭ \

বঙ্গানুবাদ।  বিয়েই নারীর বৈদিক উপনয়ন ও পতিসেবাই গুরুগৃহে বাস এবং গৃহকর্মই হোমস্বরূপ অগ্নিপরিচর্যা।

                স্বভাব এষ নারীণাং নরাণামিহ দূষণম্‌।

                অতোহর্থান্ন প্রমাদ্যন্তি প্রমদাসু বিপশ্চিতঃ \ ২য়, ২১৩ \

বঙ্গানুবাদ।  ইহলোকে পুরুষদের দূষিত করাই নারীদের স্বভাব। সুতরাং পণ্ডিত ব্যক্তিরা সর্বদা নারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকবেন।


                অবিদ্বাংসমলং লোকে বিদ্বাংসমপি বা পুনঃ।

                প্রমদা হু্যৎপথং নেতুং কামক্রোধবশানুগম্‌ \ ২য়, ২১৪ \


বঙ্গানুবাদ।  সংসারে সকলেই কাম ও ক্রোধের বশীভূত। তাই বিদ্বানই হোন বা মূর্খই হোন নারীগণ তাঁদের অনায়াসে বিপথগামী করতে পারে।

                মাত্রা স্বস্রা দুহিত্রা বা ন বিবিক্তাসনো ভবেৎ।

                বলবানিন্দ্রিয়গ্রামো বিদ্বাংসমপি কর্ষতি \ ২য়, ২১৫ \

বঙ্গানুবাদ।  মাতা, ভগিনী ও কন্যা প্রভৃতির সঙ্গেও নির্জন গৃহে একত্রে থাকা সমীচীন নয়। ইন্দ্রিয় সকল এত বলবান যে তারা জ্ঞানবান লোকেরও চিত্তচাঞ্চল্য সৃষ্টি করতে পারে।


                বালয়া বা যুবত্যা বা বৃদ্ধয়া বাপি যোষিতা।

                ন স্বাতন্ত্র্যেণ কর্তব্যং কিঞ্চিৎ গৃহেষ্বপি \ ৫ম, ১৪৭ \

বঙ্গানুবাদ।  নারী বালিকাই হোক, যুবতীই হোক বা বৃদ্ধাই হোক- গৃহমধ্যে হলেও সে স্বাধীনভাবে কোনো কার্যই করতে পারবে না।

                বাল্যে পিতুর্বশে তিষ্ঠেৎ পাণিগ্রাহস্য যৌবনে।

                পুত্রাণাং ভর্তরি প্রেতে ন ভজেৎ স্ত্রী স্বতন্ত্রতাম্‌ \ ৫ম, ১৪৮ \


বঙ্গানুবাদ।  বাল্যকালে নারী পিতার অধীন থাকবে, বিবাহের পর সে স্বামীর অধীনে থাকবে এবং স্বামীর মৃত্যুর পর পুত্রের অধীনে থাকবে। নারী কখনও স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারবে না।


                পিত্রা ভর্ত্রা সুতৈর্বাপি নেচ্ছেদ্বিরহমাত্মনঃ।

                এষাং হি বিরহেণ স্ত্রী গর্হ্যে কুর্যাদুভে কুলে \ ৫ম, ১৪৯ \

বঙ্গানুবাদ।  নারী কখনও তার পিতা বা স্বামী বা পুত্রের থেকে আলাদা থাকবে না। তা হলে সে তার পিতৃকুল ও পতিকুল উভয়কুলকেই কলঙ্কিত করে তুলবে।


                বিশীলঃ কামবৃত্তো বা গুণৈ র্বা পরিবর্জিতঃ।

                উপচর্যঃ স্ত্রিয়া সাধ্ব্যা সততং দেববৎ পতিঃ \ ৫ম, ১৫৪ \

বঙ্গানুবাদ।  পতি সদাচারহীন, পরস্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কযুক্ত বা গুণহীন হলেও সতী স্ত্রী সেই পতিকে দেবতার মতোই পূজা করবে।


                নাস্তি স্ত্রীণাং পৃথগ্‌ যজ্ঞো ন ব্রতং নাপ্যুপোষিতম্‌।

                পতিং শুশ্রূষতে যেন তেন স্বর্গে মহীয়তে \ ৫ম, ১৫৫ \

বঙ্গানুবাদ।  স্ত্রীর স্বামী ছাড়া পৃথক সত্তা নেই।  পতির অনুমতি ছাড়া ব্রত বা উপবাস নেই। নারী স্বর্গে যেতে পারে একমাত্র স্বামীসেবার মাধ্যমেই।


                বন্ধ্যাষ্টমে  ্হধিবেদ্যাব্দে দশমে তু মৃতপ্রজা।

                একাদশে স্ত্রীজননী সদ্যস্ত্বপ্রিয়বাদিনী \ ৯ম, ৮১ \

বঙ্গানুবাদ।  স্ত্রী নিঃসন্তান হলে বিয়ের অষ্টম বৎসরে, মৃতবৎসা হলে দশম বৎসরে, শুধুমাত্র কন্যা সন্তানের জন্ম দিলে একাদশ বৎসরে এবং অপ্রিয়বাদিনী হলে সদ্য সদ্য তাকে ত্যাগ করে পুনরায় বিবাহ করা যায়। 

সন্তান জন্ম দেওয়ার অক্ষমতার জন্য স্বামীকে দোষারোপ বা ত্যাগ করার কোনো বিধান কিন্তু মনু দেননি।


                অস্বতন্ত্রাঃ স্ত্রিয়ঃ কার্যাঃ পুরুষৈঃ স্বৈর্দিবানিশম্‌।

                বিষয়েষু চ সজ্জন্তঃ সংস্থাপ্যা আত্মনো বশে \ ৯ম, ২ \

বঙ্গানুবাদ।  স্বামী এবং পরিবারের পুরুষগণ স্ত্রীলোকদের দিবারাত্র কখনও স্বাধীনভাবে থাকতে দেবে না। সংগত ভোগের মাধ্যমে তাদের সর্বদা বশীভূত করে রাখবে।


                পিতা রক্ষতি কৌমারে ভর্তা রক্ষতি যৌবনে।

                রক্ষন্তি স্হবিরে পুত্রা ন স্ত্রী স্বাতন্ত্র্যমর্হতি \ ৯ম, ৩ \

বঙ্গানুবাদ।  কুমারী অবস্থায় সে পিতার, যৌবনকালে স্বামীর এবং বার্ধক্যে পুত্রগণের রক্ষণাবেক্ষণে থাকবে। নারী কখনও স্বাধীনভাবে থাকার যোগ্য নয়।


                সূক্ষ্মেভ্যোহপি প্রসঙ্গেভ্যঃ স্ত্রিয়ো রক্ষ্যা বিশেষতঃ।

                দ্বয়োর্হি কুলয়োঃ শোকমাবহেয়ুররক্ষিতাঃ \ ৯ম, ৫ \

বঙ্গানুবাদ।  যে কোনো ধরণের কুসঙ্গ থেকে নারীকে যত্নসহকারে রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় সে স্বামীর এবং পিতার উভয় কুলের দুঃখের কারণ হবে।

                উৎকৃষ্টায়াভিরূপায় বরায় সদৃশায় চ।


                অপ্রাপ্তামপি তাং তস্মৈ কন্যাং দদ্যাদ্‌ যথাবিধি \ ৯ম, ৮৮ \

বঙ্গানুবাদ।  বিবাহযোগ্য বয়স না হলেও সমজাতীয় উৎকৃষ্ট ও সুদর্শন বর পাওয়া গেলে কন্যার পিতা তার কন্যাকে যথাবিহিত ভাবে সমপ্রদান করবেন।


                নৈতা রূপং পরীক্ষন্তে নাসাং বয়সি সংস্হিতিঃ।

                সুরূপং বা বিরূপং বা পুমানিত্যেব ভুঞ্জতে \ ৯ম, ১৪ \

বঙ্গানুবাদ।  নারী রূপ বিচার করে না, বয়স সম্পর্কেও তাদের বাছবিচার নেই। সুরূপ বা কুরূপ, পুরুষ পেলেই নারী তাকে ভোগ করার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে।


                পৌংশ্চলাচ্চলচিত্তাচ্চ নৈঃস্নেহ্যচ্চ স্বভাবতঃ।

                রক্ষিতা যত্নতোহপীহ ভর্তৃষ্বেতা বিকুর্বতে \ ৯ম, ১৫ \

বঙ্গানুবাদ।  পুরুষ দর্শনেই ভোগমত্ততা হেতু নারী চঞ্চলচিত্তা ও স্নেহশূন্যা। এজন্য স্বামী কর্তৃক সুরক্ষিতা হলেও তারা স্বামীর বিরুদ্ধে ব্যভিচার করে থাকে।


                এবং স্বভাবং জ্ঞাত্বা স্বাং প্রজাপতিনিসর্গজম্‌।

                পরমং যত্নমাতিষ্ঠেৎ পুরুষো রক্ষণং প্রতি \ ৯ম, ১৬ \

বঙ্গানুবাদ।  প্রজাপতি কর্তৃক নারীদের স্বভাব এরূপভাবে সৃষ্ট হয়েছে। এ কথা জেনে স্বামী তাকে সযত্নে রক্ষণাবেক্ষণ করবে এবং তার প্রতি সদা সতর্ক থাকবে।


                শয্যাসনমলঙ্কারং কামং ক্রোধমনার্জবম্‌।

                দ্রোহভাবং কুচর্যাঞ্চ স্ত্রীভ্যো মনুরকল্পয়ৎ \ ৯ম,১৭ \

বঙ্গানুবাদ।  সৃষ্টিকালেই মনু নারীর স্বভাবের মধ্যে শয্যা অর্থাৎ বেশি নিদ্রা যাওয়া, উপবেশন অর্থাৎ বসে থাকার ইচ্ছা, অলঙ্কারপ্রিয়, কাম অর্থাৎ পুরুষকে ভোগ করার আকাঙক্ষা, ক্রোধ, কুটিলতা, পরহিংসা এবং কুচর্যা অর্থাৎ নীচ পুরুষকে ভজনা করা- এগুলির প্রতি দারুণ আসক্তি স্থাপন করেছেন।


                নাস্তি স্ত্রীণাং ক্রিয়া মন্ত্রৈরিতি ধর্মে ব্যবস্হিতিঃ।

                নিরিন্দ্রিয়া হ্যমন্ত্রাশ্চ স্ত্রিয়োহনৃতমিতি স্হিতিঃ \ ৯ম, ১৮ \

বঙ্গানুবাদ।  স্ত্রীলোকদের সংস্কার বেদমন্ত্র ব্যতীত সম্পন্ন হবে। এ জন্য তাদের চিত্তশুদ্ধি ঘটে না। তাদের কোনো শাস্ত্রজ্ঞান হবে না, যেহেতু তাদের বেদপাঠে অধিকার নেই। তারা মন্ত্রহীন, তাই তাদের দেহ পাপস্পর্শ থেকে কখনও মুক্ত হতে পারে না।  তাই তারা মিথ্যার মতই অপবিত্র।


                সদা প্রহূষ্টয়া ভাব্যং গৃহকার্যেষু দক্ষয়া।

                সুসংস্কৃতোপস্করয়া ব্যয়ে চামুক্তহস্তয়া \ ৫ম, ১৫০ \

বঙ্গানুবাদ।  নারী সর্বদাই হৃষ্টচিত্তে কালযাপন করবে, গৃহকার্যে দক্ষ হবে, সংসারের সমস্ত জিনিসপত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবে এবং খরচের ব্যাপারে মিতব্যয়ী হবে।


                যস্মৈ দদ্যাৎ পিতা ত্বেনাং ভ্রাতা বানুমতে পিতুঃ।

                তং শুশ্রূষেত জীবন্তং সংস্হিতং চ ন লঙঘয়েৎ \ ৫ম, ১৫১ \

বঙ্গানুবাদ।  পিতা অথবা পিতার অনুমতিক্রমে ভ্রাতা যাকে দান করেছে সেই পতির জীবিতকাল পর্যন্ত তাকে সেবা করা এবং মৃত্যুর পর তার স্মৃতিকে অসম্মান না করা নারীর কর্তব্য।


                অনৃতাবৃতুকালে চ মন্ত্রসংস্কারকৃৎ পতিঃ।

                সুখস্য নিত্যং দাতেহ পররোকে চ যোষিতঃ \ ৫ম, ১৫৩ \

বঙ্গানুবাদ।  মন্ত্রোচ্চারণের দ্বারা বিবাহিত পতি তার পত্নীর ঋতুকালে বা ঋতুভিন্ন-কালে, ইহকালে বা পরকালে সর্বদাই পত্নীর একমাত্র সুখদাতা।


                পাণিগ্রাহস্য সাধ্বী স্ত্রী জীবতো বা মৃতস্য বা।

                পতিলোকমভীপ্সন্তী নাচরেৎ কিঞ্চিদপ্রিয়ম্‌ \ ৫ম, ১৫৬ \

বঙ্গানুবাদ।  সাধ্বী স্ত্রী যদি পতিলোক লাভ করতে ইচ্ছা করে তা হলে যে ব্যক্তি তার পাণিগ্রহণ করেছে তার জীবিতকালে বা মৃত্যুর পরে তার কোনো অপ্রিয় কাজ সে করবে না।


                কামং তু ক্ষপয়েদ্দেহং পুষ্পমূলফলৈঃ শুভৈঃ।

                ন তু নামাপি গৃহ্নীয়াৎ পত্যৌ প্রেতে পরস্য তু \ ৫ম, ১৫৭ \

বঙ্গানুবাদ।  পতির মৃত্যুর পর বিধবা নারী পবিত্র ফুল, ফল ও মূল আহার করে দেহপাত করবে। কিন্তু কখনও অন্য পুরুষের কথা চিন্তাও করবে না।

                অপত্যলোভাদ্‌ যা তু স্ত্রী ভর্তারমতিবর্ততে।

                সেহ নিন্দামবাপ্নোতি পতিলোকাচ্চ হীয়তে \ ৫ম, ১৬১ \

বঙ্গানুবাদ।  যে বিধবা পুত্র লোভে অন্য পুরুষে ব্যভিচারিণী হয় সে ইহলোকে নিন্দনীয় হবে এবং পরকালে পতিলোক থেকে বঞ্চিতা হবে।


                নান্যোৎপন্না প্রজাস্তীহ ন চাপ্যন্যপরিগ্রহে।

                ন দ্বিতীয়শ্চ সাধ্বীনাং ক্কচিদ্ভর্তোপদিশ্যতে \ ৫ম, ১৬২ \

বঙ্গানুবাদ।  স্বামী ভিন্ন অন্য পুরুষ কর্তৃক উৎপাদিত পুত্র অথবা সহধর্মিনী ভিন্ন অপরের স্ত্রীতে উৎপাদিত পুত্রকে শাস্ত্রকারগণ পুত্র বলে স্বীকার করেন না।  সাধ্বী রমণীর দ্বিতীয় পতি গ্রহণের কোনো নির্দেশ নেই।


                ন নিষ্ক্রয়বিসর্গাভ্যাং ভর্তুর্ভার্যা বিমুচ্যতে।

                এবং ধর্মং বিজানীমঃ প্রাক্‌ প্রজাপতিনির্মিতম্‌ \ ৯ম, ৪৬ \

বঙ্গানুবাদ।  বিক্রয় বা ত্যাগ করলেও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছিন্ন হয় না। প্রজাপতি কর্তৃক এটাই ধর্ম বলে ঘোষিত হয়েছে।


                ত্রিংশদ্বর্ষোদ্বহেৎ কন্যাং হূদ্যাং দ্বাদশবার্ষিকীম্‌।

                ত্র্যষ্টবর্ষোহষ্টবর্ষাং বা ধর্মে সীদতি সত্বরঃ \ ৯ম, ৯৪ \

বঙ্গানুবাদ।  তিরিশ বৎসর বয়স্ক একজন পুরুষ পছন্দমত বারো বৎসর বয়স্কা বালিকাকে অথবা চতুর্বিংশ বৎসর বয়স্ক পুরুষ অষ্টম বর্ষীয়া বালিকাকে বিবাহ করবে।


                ভার্যা পুত্রশ্চ দাসশ্চ শিষ্যো ভ্রাতা চ সোদরঃ।

                প্রাপ্তাপরাধাস্তাড্যাঃ স্যূ রজ্জ্বা বেণুলেন বা \ ৮ম, ২৯৯ \

বঙ্গানুবাদ।  স্ত্রী, পুত্র, দাস, শিষ্য এবং কনিষ্ঠ সহোদর ভ্রাতা অপরাধ করলে তাকে রজ্জু (চাবুক) অথবা বংশদণ্ড দ্বারা প্রহার হরতে হবে।


                অমন্ত্রিকা তু কার্যেয়ং স্ত্রীণামাবৃদশেষতঃ।

                সংস্কারার্থং শরীরস্য যথাকালং যথাক্রমম্‌ \ ২য়, ৬৬ \

বঙ্গানুবাদ।  উপনয়ন বাদে স্ত্রীলোকদের দেব-সংস্কারের নিমিত্ত জাত-কর্মাদির অনুষ্ঠান করা যাবে, তবে সে সব অনুষ্ঠানে কোনো রূপ বেদমন্ত্র পাঠ করা যাবে না।

                বৈবাহিকো বিধিঃ স্ত্রীণাং সংস্কারো বৈদিকঃ স্মৃতঃ।

                পতিসেবা গুরৌ বাসো গৃহার্থোহগ্নিপরিষ্ক্রিয়া \ ২য়, ৬৭ \


বঙ্গানুবাদ।  বিবাহণ্ডসংস্কারই স্ত্রীলোকদের বৈদিক সংস্কার, বিবাহের পর পতিসেবাই গুরুগৃহে বাস, স্বামীর গৃহস্থালীর সমস্ত কাজই হল অগ্নিপরিচর্যা।

উপরোক্ত শ্লোকগুলি ছাড়াও আরও বিভিন্ন শ্লোকে নারীদের সম্পর্কে যেসব্ন বিধান দেওয়া হয়েছে সেগুলি হলঃ-

নারীর বেদপাঠে কোনো অধিকার নেই। নারীর কোনো সম্পত্তির অধিকার নেই। বেদ-কথিত দৈনিক যজ্ঞাহুতি মহিলারা দিতে পারবে না। এটা করলে সে নরকে যাবে। নারী প্রদত্ত যজ্ঞের খাদ্য ব্রাহ্মণ গ্রহণ করবে না। নারীর দেওয়া দান অশুদ্ধ, ঈশ্বর তা গ্রহণ করেন না। স্বামী ছাড়া নারী কোনো আত্মত্যাগ, প্রতিজ্ঞা, অনশন পালন করবে না। মন্ত্রপাঠ করে নারীর প্রায়শ্চিত্ত করার অধিকারও নেই। স্ত্রী স্বামীর আজ্ঞাবহ থাকলে, সে স্বর্গে আরোহণ করবে।

চতুর্থ পরিচ্ছেদ


শূদ্র

           মঙ্গল্যং ব্রাহ্মণস্য স্যাৎ ক্ষত্রিয়স্য বলান্বিতম্‌।

                বৈশ্যস্য ধনসংযুক্তং শূদ্রস্য তু জুগুপ্সিতম্‌ \ ২য়, ৩১ \

বঙ্গানুবাদ।  একজন ব্রাহ্মণের নাম শুভার্থক, ক্ষত্রিয়ের নাম শৌর্যার্থক, বৈশ্যের নাম সম্পদার্থক ও একজন শূদ্রের নাম ঘৃণার্হ হতে হবে।

                শর্মবদ্বাহ্মণস্য স্যাদ্‌ রাজ্ঞো রক্ষাসমন্বিতম্‌।

                বৈশ্যস্য পুষ্টিসংযুক্তং শূদ্রস্য প্রৈষ্যসংযুতম্‌ \ ২য়,৩২ \

বঙ্গানুবাদ।  ব্রাহ্মণের নামের সাথে (মঙ্গলবাচক) ‘শর্মা’, ক্ষত্রিয়ের নামের সাথে (রক্ষাবাচক) ‘বর্মা’, বৈশ্যের নামের সাথে (পুষ্টিবাচক) ‘গুপ্ত’ এবং শূদ্রের নামের সাথে (প্রৈষ্য বা ভৃত্যবাচক) ‘দাস’ ইত্যাদি উপপদ যুক্ত হবে।


                একমেব তু শূদ্রস্য প্রভুঃ কর্ম সমাদিশৎ।

                এতেষামেব বর্ণানাং শুশ্রূষামনসূয়য়া \ ১ম, ৯১ \

বঙ্গানুবাদ।  প্রভু ব্রহ্মা শূদ্রের জন্য একটি কাজই নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন- তা হল কোনো অসূয়া অর্থাৎ নিন্দা না করে অন্য তিন বর্ণের (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য) শুশ্রূষা অর্থাৎ সেবা করা।

                বাণিজ্যং কারয়েদ্বৈশ্যং কুসীদং কৃষিমেব চ।

                পশূনাং রক্ষণঞ্চৈব দাস্যং শূদ্রং দ্বিজন্মনাম্‌ \ ৮ম, ৪১০ \

বঙ্গানুবাদ।  রাজা বৈশ্যকে বাণিজ্য, কুসীদ, কৃষি ও পশুপালনের কাজে এবং শূদ্রকে উচ্চতর তিন বর্ণের সেবার কাজে নিযুক্ত করবে।

                শূদ্রং তু কারয়েদ্‌ দাস্যং ক্রীতমক্রীতমেব বা।          

                দাস্যায়ৈব হি সৃষ্টোহসৌ ব্রাহ্মণস্য স্বয়ম্ভুবা \ ৮ম, ৪১৩ \

বঙ্গানুবাদ।  ক্রীত বা অক্রীতই হোক শূদ্রের দ্বারা ব্রাহ্মণ দাসত্বের কাজ করিয়ে নেবে। যেহেতু, বিধাতা শূদ্রকে ব্রাহ্মণের দাসত্বের জন্যই সৃষ্টি করেছেন।

                বৈশ্যশূদ্রৌ প্রযত্নেন স্বানি কর্মাণি কারয়েৎ।

                তৌ হি চ্যুতৌ স্বকর্মভ্যঃ ক্ষোভয়েতামিদং জগৎ \ ৮ম, ৪১৮ \


বঙ্গানুবাদ।  রাজা বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে বৈশ্য ও শূদ্রকে তাদের বর্ণোচিত কার্য করাবে। কারণ এর ব্যতিক্রম হলে সংসারে নানাপ্রকার বিশৃঙখলা দেখা দেবে।


               ন শূদ্রায় মতিং দদ্যান্নোচ্ছিষ্টং ন হবিষ্কৃতম্‌।

                ন চাস্যোপদিশেদ্‌ ধর্মং ন চাস্য ব্রতমাদিশেৎ \ ৪র্থ, ৮০ \

বঙ্গানুবাদ।  শূদ্রকে কোনো উপদেশ দেবে না, অথবা যজ্ঞের খাদ্যাবশিষ্ট অথবা নিবেদিত মাখন দেবে না এবং তাকে কেউ আইন শেখাবে না। অথবা ধর্মীয় প্রকরণ তাকে দিয়ে করাবে না।


                যো হ্যস্য ধর্মমাচষ্টে যশ্চৈবাদিশতি ব্রতম্‌।

                সোহসংবৃতং নাম তমঃ সহ তেনৈব মজ্জতি \ ৪র্থ, ৮১ \

বঙ্গানুবাদ।  যে তাকে আইন শেখাবে অথবা তাকে দিয়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠান করাবে সে সেই শূদ্রের সঙ্গে অসম্বৃত নামক নরকের অন্ধকারে ডুবে যাবে।

                শূদ্রাণাং মাসিকং কার্যং বপনং ন্যায়বর্তিনাম্‌।

                বৈশ্যবচ্ছৌচকল্পশ্চ দ্বিজোচ্ছিষ্টঞ্চ ভোজনম্‌ \ ৫ম, ১৪০ \

বঙ্গানুবাদ।  ব্রাহ্মণ-শুশ্রূষাপরায়ণ শূদ্র মাসে মাসে মস্তক মুণ্ডন করবে। জনমে মরণে বৈশ্যের ন্যায় অশৌচ গ্রহণ করবে এবং ব্রাহ্মণের উচ্ছিষ্ট ভোজন করবে।

                যস্য শূদ্রস্তু কুরুতে রাজ্ঞো ধর্মবিবেচনম্‌।

                তস্য সীদতি তদ্রাষ্ট্রং পঙ্কে গৌরিব পশ্যতঃ \ ৮ম, ২১ \

বঙ্গানুবাদ।  বিচারসভায় যে রাজার সাক্ষাতে শূদ্র ন্যায়-অন্যায় ধর্ম বিচার করে, সেই রাজ্য কাদায় নিমগ্ন গোরুর মত দেখতে দেখতে নষ্ট হয়ে যায়।


                শতং ব্রাহ্মণমাক্রুশ্য ক্ষত্রিয়ো দণ্ডমর্হতি।

                বৈশ্যোহপ্যর্দ্ধশতং দ্বে বা শূদ্রস্তু বধমর্হতি \ ৮ম, ২৬৭ \

বঙ্গানুবাদ।  ক্ষত্রিয় যদি ব্রাহ্মণকে রূঢ় ভাষায় গালাগালি দেয় তবে তার দণ্ড হবে একশত পণ, বৈশ্যের ক্ষেত্রে দণ্ড হবে দেড়শত পণ এবং শূদ্র হলে তাকে দৈহিক শাস্তি দিতে হবে।


                পঞ্চাশদ্‌ ব্রাহ্মণো দণ্ড্যঃ ক্ষত্রিয়স্যাভিশংসনে।

                বৈশ্যে স্যাদর্দ্ধপঞ্চাশৎ শূদ্রে দ্বাদশকো দমঃ \ ৮ম, ২৬৮ \

বঙ্গানুবাদ।  ব্রাহ্মণ যদি ক্ষত্রিয়কে গালাগালি দেয় তবে তার শাস্তি হবে পঞ্চাশ পণ, বৈশ্যকে গালাগালি দিলে দণ্ড হবে পঁচিশ পণ এবং শূদ্রকে দিলে দণ্ড হবে মাত্র বারো পণ।

                একজাতির্দ্বিজাতীংস্তু বাচা দারুণয়া ক্ষিপন্‌।

                জিহ্বায়াঃ প্রাপ্নুয়াচ্ছেদং জঘন্যপ্রভবো হি সঃ \ ৮ম, ২৭০ \

বঙ্গানুবাদ।  যদি কোনো একজাতি অর্থাৎ শূদ্র দ্বিজবর্ণের কোনো লোককে কঠোর বাক্যের দ্বারা গালি দেয়, তাহলে তার জিহ্বা কেটে ফেলা উচিত, কারণ সে নিকৃষ্ট স্থান থেকে উৎপন্ন হয়েছে।

                নামজাতিগ্রহং ত্বেষামভিদ্রোহেণ কুর্বতঃ।

                নিক্ষেপ্যোহুয়োময়ঃ শঙ্কুজর্বলন্নাস্যে দশাঙ্গুলঃ \ ৮ম, ২৭১ \

বঙ্গানুবাদ।  যদি সে অপমানজনকভাবে তাদের নাম বা বর্ণের উচ্চারণ করে তা হলে দশ আঙুল লম্বা লাল উত্তপ্ত লৌহশলাকা তার মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে।

                ধর্মোপদেশং দর্পেণ বিপ্রাণামস্য কুর্বতঃ।

                তপ্তমাসেচয়েৎ তৈলং বক্ত্রে শ্রোত্রে চ পার্থিবঃ \ ৮ম, ২৭২ \


বঙ্গানুবাদ।  যদি ঔদ্ধত্যের বশে সে পুরোহিতদের তাদের কর্তব্য সম্বন্ধে উপদেশ দেয় তা হলে (রাজা) তার মুখের ও কানের ভিতর ফুটন্ত গরম তেল ঢেলে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।

                যেন কেনচিদঙ্গেন হিংস্যাচ্চেৎ শ্রেষ্ঠমন্ত্যজঃ।

                ছেত্তব্য তত্তদেবাস্য তন্মনোরনুশাসনম্‌ \ ৮ম, ২৭৯ \

বঙ্গানুবাদ।  শূদ্র যে অঙ্গের দ্বারা ব্রাহ্মণকে আঘাত করবে (রাজা) তার সেই অঙ্গ ছেদন করবে এটাই মনুর বিধান।


                পাণিমুদ্যম্য দণ্ডং বা পাণিচ্ছেদনমর্হতি।

                পাদেন প্রহরন্‌ কোপাং পাদরচ্ছদনমর্হতি \ ৮ম, ২৮০ \

বঙ্গানুবাদ।  শূদ্র যদি দ্বিজবর্ণের কারও প্রতি আঘাত করার উদ্দেশ্যে হাত বা পা তোলে তবে রাজা যথাক্রমে তার হাত বা পা ছেদন করবে।

                সহাসনমভিপ্রেপ্সু রুৎকৃষ্টস্যাপকৃষ্টজঃ।

                কট্যাং কৃতাঙ্কো নির্বাস্যঃ স্ফিচং বা  ্হস্যাবকর্তয়েৎ \ ৮ম, ২৮১ \

বঙ্গানুবাদ।  যদি কোনো শূদ্র ব্যক্তি ব্রাহ্মণের সঙ্গে একই আসনে বসে তাহলে তার কোমরে ছেঁকা লাগিয়ে দাগ দিয়ে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে কিংবা  তার পাছা খানিকটা কেটে দেবে।

                অবনিষ্ঠীবতো দর্পাদ্দ্বাবোষ্ঠৌ ছেদয়েন্নৃপঃ।

                অবমূত্রয়তো মেঢ্রমবশর্দ্ধয়তো গুদম্‌ \ ৮ম, ২৮২ \

বঙ্গানুবাদ।  যদি ঔদ্ধত্যবশত সে (শূদ্র) ব্রাহ্মণকে থুথু দেয় তা হলে রাজা তার দু’টি ঠোঁট, যদি সে তার দেহের উপর প্রস্রাব করে তাহলে তার লিঙ্গ এবং যদি তার উপর পায়ুবায়ু ত্যাগ করে তা হলে তার গুহ্যদ্বার কেটে দেবে।

                কেশেষু গৃহ্নতো হস্তৌ ছেদয়েদবিচারয়ন্‌।

                পাদয়োর্দার্ঢ়িকায়াঞ্চ গ্রীবায়াং বৃষণেষু চ \ ৮ম, ২৮৩ \

বঙ্গানুবাদ।  যদি কোনো শূদ্র ব্রাহ্মণের চুল ধরে টানে, কিংবা পা, দাড়ি, গ্রীবা কিংবা অণ্ডকোষ ধরে টানে, তাহলে রাজা তৎক্ষণাৎ তার দু’টি হাত কেটে ফেলার ব্যবস্থা করবে।

                ব্রাহ্মণান্‌ বাধমানন্তু কামাদবরবর্ণজম্‌।

                হন্যাচ্চিত্রৈর্বধোপায়ৈরুদ্বেজনকরৈর্নৃপঃ \ ৯ম, ২৪৮ \

বঙ্গানুবাদ।  যদি কোনো শূদ্র ইচ্ছাপূর্বক ব্রাহ্মণকে শারীরিক ও আর্থিক পীড়া দেয়, তা হলে অতি কষ্টপ্রদ নানা উদ্বেগজনক উপায়ে (যেমন শূলে চড়িয়ে, মস্তক ছেদন করে দীর্ঘকাল যন্ত্রণা ভোগ করিয়ে) সেই শূদ্রকে বধ করবে।

               

শূদ্রং তু কারয়েদ্‌ দাস্যং ক্রীতমক্রীতমেব বা।

                দাস্যায়ৈব হি সৃষ্টো  ্হসৌ ব্রাহ্মণস্য স্বয়ম্ভুবা \ ৮ম, ৪১৩ \

বঙ্গানুবাদ।  ক্রীত হোক বা অক্রীত হোক শূদ্রের দ্বারা ব্রাহ্মণ সেবা করিয়ে নেবে। যেহেতু শূদ্রকে বিধাতা ব্রাহ্মণদের সেবা করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন।


                ন স্বামিনা নিসৃষ্টো ্হপি শূদ্রো দাস্যাদ্বিমুচ্যতে।

                নিসর্গজং হি তত্তস্য কস্তস্মাত্তদপোহতি \ ৮ম, ৪১৪ ।

বঙ্গানুবাদ।  তার প্রভু যদি তাকে মুক্ত করেও দেয় তবুও সে সেবা করা থেকে মুক্তি পাবে না। কারণ, সেবা তার সহজাত ধর্ম। সুতরাং কে তাকে সেবা থেকে মুক্ত করতে পারে?


                শুচিরুৎকৃষ্টশুশ্রূষুর্মৃদুবাগনহঙ্কৃতঃ।

                ব্রাহ্মণাদ্যাশ্রয়ো নিত্যমুৎকৃষ্টাং জাতিমশ্নুতে \ ৯ম, ৩৩৫ \

বঙ্গানুবাদ।  যদি সে (শূদ্র) পবিত্র, উচ্চবর্ণের প্রতি অনুগত, মৃদুভাষী, নিরহঙ্কারী এবং সর্বদা ব্রাহ্মণের প্রতি বিনীত থাকে তাহলে সে পরজন্মে উচ্চবর্ণে জন্মগ্রহণ করে।


                শূদ্রস্তু বৃত্তিমাকাঙক্ষেৎ ক্ষত্রমারাধয়েদ্‌ যদি।

                ধনিনং বাপ্যুপারাধ্য বৈশ্যং শূদ্রো জিজীবিষেৎ \ ১০ম, ১২১ \

বঙ্গানুবাদ।  শূদ্র জীবিকার্জনের জন্য ক্ষত্রিয়ের সেবা করতে পারে। অথবা তার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য কোনো ধনী বৈশ্যের সেবা করতে পারে।


                স্বর্গার্থমুভয়ার্থং বা বিপ্রানারাধয়েত্তু সঃ।

                জাতব্রাহ্মণশব্দস্য সা হ্যস্য কৃতকৃত্যতা \ ১০ম, ১২২ \

বঙ্গানুবাদ।  কিন্তু সে কোনো ব্রাহ্মণের সেবা করবে শুধু স্বর্গলাভের জন্য অথবা স্বর্গলাভ এবং জীবন ধারণের জন্য। কারণ ব্রাহ্মণ শব্দ উচ্চারণের দ্বারাই সবকিছু লাভ হয় এবং ইহাই তার করা উচিত।


                বিপ্রসেবৈব শূদ্রস্য বিশিষ্টং কর্ম কীর্ত্যতে।

                যদতো  ্হন্যদ্ধি কুরুতে তদ্ভবত্যস্য নিষ্ফলম্‌ \ ১০ম, ১২৩ \

বঙ্গানুবাদ।  শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ সেবাই একজন শূদ্রের সবচেয়ে ভাল জীবিকা। কারণ, এ ছাড়া আর যা কিছু সে করে তা নিষ্ফল।


                উচ্ছিষ্টমন্নং দাতব্যং জীর্ণানি বসনানি চ।

                পুলাকাশ্চৈব ধান্যানাং জীর্ণাশ্চৈব পরিচ্ছদাঃ \ ১০ম, ১২৫।

বঙ্গানুবাদ।  ব্রাহ্মণ উচ্ছিষ্ট অন্ন ও জীর্ণণ্ডপরিত্যক্ত বস্ত্র, ধানের পুলাক অর্থাৎ অসার ধান এবং পুরানো জীর্ণ পরিচ্ছদ অর্থাৎ আসবাবপত্র তাকে (শূদ্রকে) দেবে।


                ন ব্রাহ্মণস্য ত্বতিথির্গৃহে রাজন্য উচ্যতে।

                বৈশ্যশূদ্রৌ সখা চৈব জ্ঞাতয়ো গুরুরেব চ \ ৩য়, ১১০ \

বঙ্গানুবাদ।  ব্রাহ্মণের গৃহে ক্ষত্রিয়, বৈশ্য বা শূদ্র এলে তারা অতিথি বলে গণ্য হবে না। এতদ্ব্যতীত বন্ধু, জ্ঞাতি বা গুরু এলেও অতিথি পদবাচ্য হতে পারে না।


                বৈশ্যশূদ্রাবপি প্রাপ্তৌ কুটুম্বেহতিথিধর্মিণৌ।

                ভোজয়েৎ সহ ভৃত্যৈস্তাবানৃশংস্যং প্রয়োজনম্‌ \ ৩য়, ১১২ \

বঙ্গানুবাদ।  ব্রাহ্মণের গৃহে যদি বৈশ্য বা শূদ্র অতিথিরূপে আসে তবে গৃহকর্তা দয়াপরবশ হয়ে তাদের বাড়ির ভৃত্যদের সঙ্গে ভোজন করাবে।


                উত্তমাং সেবমানস্তু জঘন্যো বধমর্হতি।

                শুল্কং দদ্যাৎ সেবমানঃ সমামিচ্ছেৎ পিতা যদি \ ৮ম, ৩৬৬ \

বঙ্গানুবাদ।  নিম্নবর্ণের পুরুষ যদি উচ্চবর্ণের নারীর সঙ্গে তার ইচ্ছা অনুসারেও সম্ভোগ করতে থাকে তা হলে সেই পুরুষের বধদণ্ড হবে। কিন্তু সমজাতীয় কন্যার সাথে ওই রকম করলে সে ওই কন্যার পিতাকে শুল্ক দেবে, যদি তার পিতা ওই শুল্ক নিতে ইচ্ছুক হয়।


                শূদ্রো গুপ্তমগুপ্তং বা দ্বৈজাতং বর্ণমাবসন্‌।


                অগুপ্তমঙ্গসর্বস্বৈর্গুপ্তং সর্বেণ হীয়তে \ ৮ম, ৩৭৪ \

বঙ্গানুবাদ।  কোনো শূদ্র যদি দ্বিজ-জাতির কোনো নারীর সঙ্গে বসবাস করে এবং সেই নারীর অভিভাবক থাক বা না থাক তাহলে তার নিম্নাঙ্গ কেটে ফেলা (লিঙ্গচ্ছেদন) হবে এবং তাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হবে।


                বিস্রব্ধং ব্রাহ্মণঃ শূদ্রাদ্‌ দ্রব্যোপাদানমাচরেৎ

                ন হি তস্যাস্তি কিঞ্চিৎ স্বং ভর্তৃহার্যধনো হি সঃ \ ৮ম, ৪১৭ \

বঙ্গানুবাদ।  একজন ব্রাহ্মণ নিশ্চিত মনে একজন শূদ্রের জিনিস নিয়ে নিতে পারে, কারণ শূদ্রের নিজস্ব বলে কিছু নেই, তার প্রভু তার সমস্ত সম্পত্তি নিয়ে নিতে পারে।


                শক্তেনাপি হি শূদ্রেণ ন কার্যো ধনসঞ্চয়ঃ।

                শূদ্রো হি ধনমাসাদ্য ব্রাহ্মণানেব বাধতে \ ১০ম, ১২৯ \

বঙ্গানুবাদ।  সক্ষম হলেও শূদ্র কোনো সম্পদ সঞ্চয় করবে না। কারণ, ধনগর্বে শূদ্র ব্রাহ্মণকে অপমান করতে পারে।

শূদ্র সম্পর্কে আরও বিধান দিয়েছেন মনু- শূদ্রের উপস্হিতিতে কখনও বেদ পাঠ করবে না। শূদ্রের ঈশ্বরের অনুগ্রহলাভের অধিকার নেই ইত্যাদি।


এই পুস্তিকা রচনায় যে যে বইয়ের সাহায্য নেওয়া হয়েছেঃ-

১।     বাবাসাহেব ড: আম্বেদকর রচনাসম্ভার, ৭ম খণ্ড,

        প্রকাশকঃ ড: আম্বেদকর ফাউণ্ডেশন,

        কল্যাণ মন্ত্রক, ভারত সরকার, নতুন দিল্লি - ১১০ ০০১।


২।     মানবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত মনুসংহিতা

 প্রকাশকঃ সংস্কৃত পুস্তক ভাণ্ডার, ৩৮, বিধান সরণী, কলকাতা - ৭০০ ০০৬।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86930